ঘাত-প্রতিঘাত মারিয়ে ৩২ বছর পেড়িয়ে পাহাড়তলী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ

রোকসানা রুনা, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বর্তমান সমাজে কিছু উদ্যোগ চোখে পড়ে যেগুলো অল্পকিছুদিন কাজ করেই নিঃশেষ হয়ে যেতে দেখা গেছে।  আর এসব উদ্যোগ নেন কেউ কিছু ব্যক্তিগত অর্জনের লক্ষ্যে, কেউ শুধুই মানবিকতার কারণে আর কেউ কেউ আদর্শকে ধরে রেখে সমাজকে পরির্বতনের প্রচেষ্টায়।  ব্যক্তিগত অর্জনের স্বপ্নে যে সমস্ত সংগঠনগুলো গড়ে উঠেছে সেগুলো একটি সময়ে এসে বিলীন হয়ে যায়।  বুঝতে বাকী থাকে না- ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য তিনি বা তারা এমন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।  আর মানবিকতার কারণে যেসব সংগঠন গড়ে ওঠে বা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তার অধিকাংশই হয় বিচ্ছিন্ন, না হয় তীর হারা ঢেউয়ের মতো।  একটিমাত্র বিশাল ঢেউ যদি আঁচড়ে পড়ে তাহলে এটি ধ্বংস হয়ে যায়।  আর যেসব কর্মসূচি বা সংগঠন গড়ে ওঠে মানবিক আদর্শকে ধারণ করে সমাজ পরিবর্তনের ব্রত নিয়ে- এমন সংগঠনগুলো পরবর্তীতে সমাজে, রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি আস্থার জায়গায়, ভালোবাসার জায়গায় পরিণত হয়।  একটি আবেগের জায়গায় পরিণত হয় যার জন্য মানুষ জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করে না।

স্বাস্থসেবা দানের একটি মুহুর্ত।

এমন অসংখ্য সংগঠন আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সারা বাংলাদেশে।  বলা হয়ে থাকে- বাংলাদেশে যে পরিমাণ মানবিক সংগঠন গড়ে উঠেছে তা বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না।  শুধুমাত্র সমাজ, দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে, অবস্থানগত পরিবর্তনে এ সমস্ত সংগঠনগুলো কাজ করে থাকে নিঃস্বার্থভাবে।  এমন অসংখ্য সংগঠনের একটি হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানাধীন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ।  একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শকে ধারণ করে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি দলীয় ভাবাদর্শের বাইরে গিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষের কল্যাণে নিবেদন করেছেন তাদের সমস্ত কার্যক্রম।  দল-মত নির্বিশেষে এই সংগঠনটি হয়ে উঠেছিল বঞ্চিত মানুষের আশ্রয়স্থলে।  চিকিৎসা, শিক্ষা সহায়তা, রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচানো, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সমাজের নানান অসঙ্গতি দূরীকরণে ভূমিকা রাখা, বেকার ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থানে সহায়তা, স্থানীয় যুবসমাজকে সংগঠিত করে সমাজ উন্নয়নে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে বিপথগামিতা রোধ করা, স্থানীয় সিনিয়র সিটিজেনদের কল্যাণে পাশে থাকাসহ নানানবিধ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এই সংগঠনটি পাড়ি দিয়েছে ৩২ বছর।  এই ৩২ বছরে ছিল নানান চড়াই-উৎড়াই, বাঁধা-বিপত্তি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত।  ছিল রাজনৈতিক চাপ, আন্দোলন-সংগ্রামের ডাক।  এই সংগঠনের একটি কমিটির অভিষেক মানেই ছিল দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য বড় আয়োজন।  অভিষেক অনুষ্ঠান পরিণত হতো মানবিক আয়োজনে।  এমন নানান কার্যক্রম পরিচালনা করে এলাকায় আজ ভালোবাসার, আবেগের, অস্তিত্বের একটি জায়গায় পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ পাহাড়তলী শাখাটি।  এই সংগঠন থেকেই আজ চট্টগ্রামের অনেক বড় সংগঠকে পরিণত হয়েছেন অনেকে যাদের সংগঠক হওয়ার শিক্ষাটা এই সংসদ থেকেই নেয়া।
জানা গেছে, এক সময় বৃহত্তর পাহাড়তলী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ছিল না।  তৎকালীন ২১ নম্বর ওয়ার্ড (বর্তমানে ১২ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড) ছিল বিএনপির ঘাঁটি। মুসলিম লীগ-জামায়াতসহ অনেক সংগঠনের শক্ত অবস্থান ছিল এই অঞ্চলে।  বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের নেতা-কর্মীরা ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনে।  আজ শক্ত ভীতে দাঁড়িয়ে এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগকে মানুষের আস্থায় এনেছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ।  এরশাদ বিরোধী, বিএনপি-জামায়াত বিরোধী, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ- এমন কথা জানান দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইসমাইল, সরাইপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আলহাজ্ব মো. নুরুল আমিনসহ অনেকেই।  তাঁদের মতে, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদকে অনেকে আশ্রয়স্থল হিসেবে মনে করতেন।
সম্প্রতি ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি পড়েছিল অস্তিত্বের সংকটে। কিন্তু সংগঠনটির প্রাক্তন-বর্তমান নেতৃত্বের দৃঢ়চেতা মনোভাবে এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটে।  বর্তমানে সংগঠনটি পুরোদমে নিজেদের মানবিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার পরিচয় পুন:প্রকাশে বেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির একাংশ।

১৯৮৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পথচলা শুরু করা এই সংগঠনটি চলতি বছরের ২৬ ডিসেম্বর উদ্যাপন করবে ৩২তম বার্ষিকী।  সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাশেম রেজা ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. কামরুল হক জানান, সংগঠনটি গঠনতন্ত্র অনুসারে চলে।  তবে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কমিটি হয়নি যা দুঃখজনক।  ব্যক্তি বিশেষের পছন্দে কিছুটা অ-গঠনতান্ত্রিকভাবে চলেছে সংগঠনটি।  তবে আমরা এখন আবারও ঐক্যবদ্ধ।
১৯৮৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের অফিসটি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে দান করেন কাজী লোকমান নামের স্থানীয় একজন।  তখন শেখ হাসিনার পক্ষে দলিলগ্রহিতা হিসেবে জায়গাটি বুঝে নেন এম এ হাশেম রেজা, একেএম কামরুল হক, দিদারুল আলম, দিদারুল আলম সওদাগর, রেজাউর রহমান রুবেল ও মনজুরুল আলম।
২০০৯ সালের পর থেকে ২০২০ সালে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত সময়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের অফিসের অনেক মূল্যবান আসবাবপত্র, দলিলাদি, সংগঠনের কার্যক্রম সংক্রান্ত অনেক কাগজপত্র, টেলিভিশন, ল্যাপটপ, ফ্যান, চেয়ার, স্টিলের ফাইল ক্যাবিনেটসহ সকল অফিস সরঞ্জাম চুরি হয়ে যায়।  এখন অফিস বলতে একটি টেবিল ও কয়েকটি চেয়ার ছাড়া সংগঠনের আর কিছু নেই।
১৯৮৮ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়ে মোট তিনটি নির্বাচিত কমিটি দ্বারা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদটি পরিচালিত হয়।  এসময়কালে নেতৃত্ব দেন যথাক্রমে ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে ফখরুদ্দিন সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এমএ হাশেম রেজা, ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সভাপতি এম এ হাশেম রেজা, সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে কাজী এনায়েত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ইসমাইল।  ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়ে গঠনতান্ত্রিকভাবে কোনো কমিটি ছিল না।  এই সময়কালে সংগঠনটি চলেছে স্বঘোষিত কমিটি দ্বারা।  তখন সংগঠনেরই অনেকে জানতো না যে কমিটিতে কে বা কারা রয়েছেন।  এই সময়ে সংগঠনটি একেবারেই ঝিমিয়ে পড়ে।  ফলে সংগঠনের প্রতি যে মমত্ববোধ ও ভালোবাসা ছিল- তা বিসর্জন দিয়ে অনেকেই নিজেদের গুটিয়ে নেন।  তবে ২০০৯-২০১২ সময়ে গঠন হয় নতুন কমিটি।  মনজুরুল আলমকে সভাপতি এবং দিদারুল আলম সওদাগরকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা এই কমিটি তিন বছরের স্থলে ২০২০ পর্যন্ত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে।  এই সময়ে সংগঠনের কার্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং সেই দ্বন্দ্বের দৌড় গিয়ে দাঁড়ায় মহাসড়কে মানববন্ধন পর্যন্ত।  যদিও শেষ পর্যন্ত সেই দ্বন্দ্বের নিরসন হয়েছে।  বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ রয়ে গেছে তার পুরনো অফিসেই।  ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি।
নতুন করে গঠন করা আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলরপ্রার্থী অধ্যাপক মো. ইসমাইলকে।  এতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় এম এ হাশেমকে।  আহ্বায়ক কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলহাজ্ব আকতার মিয়া, একেএম কামরুল হক, দিদারুল আলম, সেকান্দর মিয়া, রেজাউর রহমান রুবেল, কাজী মো. আকরাম, মঞ্জুর আলম (ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসয়ী), মো. খোরশেদ আলম, মো. ফরিদ আলম। কার্যকরী সদস্য করা হয় মো. দিদারুল আলম সওদাগরকে। এই পরিষদে আরো রয়েছেন মো. অলি মিয়া, মো. আলমগীর, সিরাজ খাঁন, আজিম খাঁন, মো. রফিক।
সংগঠনটি এতোটাই জনপ্রিয় ছিল যে, দল-মত নির্বিশেষে সবার আস্থা অর্জন করেছিল।  একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শ নিয়ে গঠিত এই সংগঠনটি তাই বিএনপিসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কখনোই হামলা, মামলার শিকার হয়নি।  যদিও ১৯৯৫ সালের দিকে সংগঠনটিতে একবার হামলার ঘটনা ঘটায় বিএনপি- এমন তথ্য জানান অধ্যাপক মো. ইসমাইল।
দেশ ও মানুষের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে চট্টগ্রাম তথা বৃহত্তর পাহাড়তলী অঞ্চলে এই সংগঠনটি ছিল নেতৃত্বে।  এই অঞ্চলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন এই সংগঠনেরই নেতা-কর্মীরা।  অলংকার মোড়, একে খান মোড়সহ চট্টগ্রামে প্রবেশদ্বারগুলোতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি আদায়ের সূঁতিকাগার ছিল এই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ।
সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে।  আর এই সংগঠন মাথা তুলে দাঁড়ায় প্রয়াত চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়।  কখনোই বঙ্গবন্ধুর নাম বিক্রি না করা এবং অবশ্যই সংগঠনকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার না করার অঙ্গীকার নিয়ে সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হলেও বিভিন্ন সময় এই সংগঠনের নাম বিক্রি করে, সংগঠনের পদবী বিক্রি করে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে, চাঁদাবাজি, বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সুবিধাগ্রহণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এই সংগঠনটিকে ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন সংগঠনের বর্তমান আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. ইসমাইল, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাশেম রেজা ও কামরুল হক।  ফলে সংগঠনের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছে বলে তারা মনে করেন।  তবে এ থেকে বেড়িয়ে সংগঠনটি এখন স্ব-মহিমায় এগিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা।
১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও আকস্মিক বন্যার সময় অনেকটাই অপ্রস্তুতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সংগঠনটি।  ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা, পুনর্বাসন সহায়তা, চিকিৎসাসেবাসহ নানান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সংগঠনটি ধীরে ধীরে পাহাড়তলী অঞ্চলে স্থানীয় মানুষদের চিকিৎসাসেবা, শিশুদের সব ধরণের টিকাদান কর্মসূচি, রক্তদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে।  সংগঠনের নতুন কমিটির অভিষেক মানেই ছিল মানবিক আয়োজন।  এই অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচি, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, মেধাবি শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও শিক্ষা উপকরণ সহায়তা, দরিদ্র রোগীকে চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা, নতুন পোশাক বিতরণ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে মানবিক সংগঠন হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে।  ১৯৯৪ সালের অভিষেক অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৮৯ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ ছিল এই সংগঠনের বড় একটি অর্জন।  স্থানীয় নানান সমস্যার সমাধানেও এই সংগঠনের ভূমিকা থাকতো অগ্রভাগে।  মাদক, সন্ত্রাস, অসামাজিকতা রোধে এই সংগঠনটি রেখে আসছে অগ্রণী ভূমিকা।  এলাকার বিয়ে, সামাজিক বিভিন্ন উদ্যোগে ছিলো এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সহায়তা।
এই সংগঠনের জন্য কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণের ঘটনাও আছে। ২৫ আগস্টের ব্যানার বাঁধতে গিয়ে নীচে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন সংগঠনের কর্মী এবাদুর রহমান।
সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এমএ হাশেম রেজা দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, বর্তমানে যে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে- এই কমিটি আগামি তিন মাসের মধ্যে একটি ভালো, গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।  সংগঠনকে অপবাদ-কালিমাহীন রেখে সেবামূলক মানবিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলা, অতীতের মতো ক্রীড়া, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংগঠনের যে ইমেজ ছিল তা ফিরিয়ে এনে সুসংহত করা এখন আমাদের প্রধানতম কাজ।
দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলরপ্রার্থী অধ্যাপক মো. ইসমাইল দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৫ সালের শেষভাগ পর্যন্ত বৃহত্তর পাহাড়তলী বিশেষত তৎকালিন ২১ নম্বর ওয়ার্ড (বর্তমানে ১২ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত) ছিল বিএনপির ঘাঁটি।  তখন আমি এই ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম।  তখন এখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা ছিল স্বপ্নের মতো।  সেই সময়ে সংগঠনের অনেকটা দুঃসময়ে আমি অনেকের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিই।  বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের কর্মীরা সেই সময়ের বিএনপিবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে।  তিনি বলেন, সংগঠনটি অনেক নেতা তৈরি করেছে।  এই সংগঠন করে অনেকে নিজেদের পরিবর্তন করলেও সংগঠনের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।  বলেন, আমি মনজু-দিদার সওদাগরের হাতে সংগঠনের হাল ছেড়ে দিয়ে আসার পর সংগঠনটি একেবারেই ধ্বংসের পথে চলে গিয়েছিল।  সংগঠনের অফিসটিও বেদখল হতে চলেছিল।  যাই হোক, সেই সমস্যা নিরসন হয়েছে।  আমি বর্তমানে আহ্বায়ক হিসেবে সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছি।  খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংগঠনটির একটি ভালো কমিটি গঠন করে দিতে চাই।  যাতে আবারো সংগঠনটি স্বমহিমায় কাজ করতে পারে।
সরাইপাড়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলরপ্রার্থী আলহাজ্ব মো. নুরুল আমিন দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ এই অঞ্চলে আওয়ামী রাজনীতির ভীত শক্ত করেছে।  আন্দোলন-সংগ্রাম, স্থানীয়ভাবে সামাজিক কার্যক্রমে এই সংগঠনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।  এই সংগঠন করে অনেকের অনেক উন্নতি হলেও সংগঠনের একটি রুম ছাড়া কিছুই নেই- এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যাই হোক, অধ্যাপক ইসমাইল সাহেবের নেতৃত্বে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।  আমরা সুন্দর একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংগঠনটির অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

ডিসি/এসআইকে/আরআর