তেঁতুলতলা মাঠের নির্মাণসামগ্রী সরাতে আলটিমেটামসহ ৫ দাবি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের জন্য পোঁতা রড-সিমেন্ট তুলে ফেলতে আগামিকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।  একইসঙ্গে মাঠটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে সরকার ও পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।  মাঠ রক্ষায় জানানো হয়েছে পাঁচ দফা দাবি।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে তেঁতুলতলা মাঠে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
সমাবেশে সমাজকর্মী ও মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর বলেন, তেঁতুলতলা মাঠে যত রড-সিমেন্ট পোঁতা হয়েছে সেগুলো আগামিকালের মধ্যে তুলে ফেলতে হবে।  এ জায়গা থানা ভবন হওয়ার মতো জায়গা নয়।  মাঠটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।  নামমাত্র হলেও এ মাঠটি যেন কাউকে দেওয়া না হয়।
সমাবেশে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ব্লাস্ট, গ্রিন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
খুশি কবীর বলেন, যখন একজনকে আটকের পর তিনি জানেন না তাকে নিয়ে কি করা হবে?  তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হবে না কি আদালতে তুলে রিমান্ডে নেওয়া হবে?  সরকারের কিছু কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হয়েছিল ১৩ ঘণ্টা পর হলেও রত্না আপা (মাঠ রক্ষা আন্দোলনকর্মী সৈয়দা রত্না) ও তার সন্তানকে ছাড়া হয়।  তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় আমাদের আন্দোলন চলবেই।  আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দেশের মানুষের টাকায় তারা বেতন নেয়।  পুলিশ বাহিনী মনে করে, তারা বেআইনি কাজ করতে সক্ষম।
তিনি বলেন, গতকাল রবিবার যেভাবে রড-সিমেন্ট ঢেলে কাজ শুরু করেছিল তখনই মনে হয়েছিল পুলিশ এ জায়গাটি দখল করতে চায়।  সবার সঙ্গে একমত হয়ে বলতে চাই- এখানে যত রড-সিমেন্ট আছে সব উপড়ে ফেলতে হবে।  এ কাজটি পুলিশ করবে।
নাগরিক সমাবেশে বাপার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান দখলমুক্ত রাখতে হবে।  কিন্তু এ মাঠ দখলমুক্ত করতে যখন কোনো সন্তানের মা দাঁড়িয়ে যান, যখন সেই মাকে গারদে নেওয়ার সাহস দেখানো হয়, সেটা কখনোই সুস্থতা নয়।  সেটা দুর্বৃত্তায়ন।  যে আইজিপি প্রায়ই বলে থাকেন, তিনি মানবিক পুলিশ বাহিনী গড়বেন।  এই কি সেই মানবিক পুলিশ বাহিনীর পরিচয়?  একজন মাকে বন্দি করতে তারা কুণ্ঠিত হয় না!
তিনি বলেন, কার বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, এটা পরিষ্কার করতে হবে।  কোথায় এ এলাকার সংসদ সদস্য?  কেন তিনি এ মাঠে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন না?  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা দিতে চাই।  তিনি বলেছেন আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থাপনায় উনিও (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) একসময় হাতিরঝিলে আন্দোলন করেছিলেন বলেই আজ হাতিরঝিলের সৃষ্টি হয়েছে।  শিখেছি আমরা উনার কাছ থেকে।  আমরা তেঁতুলতলা মাঠ ছাড়ছি না, শুধু পরিষ্কার করে জানিয়ে দিতে চাই- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও যদি ঈদের বন্ধে কাজ করে ফেলা হয় তাহলে পরিণতি ভালো হবে না।
প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের জামাত এলাকাবাসী এ মাঠেই পড়তে চান উল্লেখ করে ইকবাল হাবিব বলেন, আশা করি কলাবাগান থানা পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
নাগরিক সমাবেশে বেলার প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপনসহ স্থানীয়রা বক্তব্য দেন।
সমাবেশ থেকে ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো-
১. স্থানীয়রাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও রাজউককে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এ মাঠ তারা কেমন করে ব্যবস্থাপনা করবে।
২. বিকল্প জায়গায় থানা করতে হবে।  এখানে থানা হবে না।
৩. মাঠটি আবারও আগের মতো ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
৪. বেআইনিভাবে রত্না ও তার ছেলেকে আটক রাখার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।  যেন সরকারি কাজের নামে নাগরিকদের অধিকারের ওপর আর কেউ হস্তক্ষেপ করতে না পারে।
৫. এলাকাবাসীকে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো যাবে না।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ