পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ২০ বস্তায় পাওয়া গেল ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক তিন মাস ৩ মাস ৬ দিন পর ফের খোলার পর ২০ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে মিলেছে স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রাও। শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৯ টার দিকে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এতে রেকর্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গে‌ছে।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ‌্যা সা‌ড়ে ৭ টায় গণনা শে‌ষে টাকার এ প‌রিমাণ জানা যায়। অতি‌রিক্ত জেলা ম্যাজি‌স্ট্রেট এটিএম ফরহাদ চৌধুরী‌ বিষয়‌টি নি‌শ্চিত ক‌রেন।
ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে আটটি লোহার দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর বাক্সগুলো খোলা হয়। এবার তিন মাস ছয়দিন পর শনিবার সকাল ৯টার দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। এসময় বাক্সগুলোতে রেকর্ড ২০ বস্তা টাকা পাওয়া যায়।
টাকা গণনা কাজে সিনিয়র সহকারী কমিশনার অহনা জিন্নাত, শেখ জাবের আহমেদ, সুলতানা রাজিয়া, সহকারী কমিশনার মোছা. নাবিলা ফেরদৌস, মো. মাহমুদুল হাসান, রওশন কবীর, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমানসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালের ১ অক্টোবর ৩ মাস একদিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল। এবার তিন মাস ছয়দিন পর আটটি দানবাক্স খোলা হলো।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৯ টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দান দানবাক্স খোলা হয়। দানবাক্সগুলো খুলে গণনা শেষে নতুন এই রেকর্ড পরিমাণ টাকা পাওয়া গেলো।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এই মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ মসজিদে দান করেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পিরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, শনিবার সকালে টাকা গণনার কাজে অংশ নেন রুপালি ব্যাংকের এজিএম, মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, গত বছরের ১ অক্টোবর এসব দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। সেসময় ১৫ বস্তায় সর্বমোট তিন কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়াও পাওয়া যায় বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী জানান, পাগলা মসজিদে দান করলে মনের ইচ্ছাপূরণ হয়, এমন বিশ্বাসে মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মের লোকজনও এখানে দান করেন।
উল্লেখ্য, কথিত আছে প্রায় ৫০ বছর আগে পাগলবেশী এক সাধু পুরুষ নরসুন্দা নদীর মাঝখানে পানিতে মাদুর পেতে আশ্রয় নেন। তার মৃত্যুর পর সমাধির পাশে এ মসজিদটি গড়ে ওঠে। সেই থেকে পাগলা মসজিদ নামে পরিচিতি মসজিদটি। তবে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এ মসজিদটি গড়ে উঠেছিল।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ