ইবিতে ছাত্রী নির্যাতনে ৩ অভিযুক্তের হলে অবস্থান, ভয়ে তথ্য দিচ্ছেন না ছাত্রীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী তাবাসসুম ইসলাম ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি।
অন্তরা, তাবাসসুম ক্যাম্পাস ত্যাগ করলেও অই হলে বহাল তবিয়তে অবস্থান করছেন অভিযুক্ত আরও তিনজন।
বরং ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থানকালেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হল প্রশাসন। ততদিন পর্যন্ত তারা হলেই অবস্থান করতে পারবে বলেও জানায় হল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে নির্যাতনের তথ্য পাওয়ার আশায় গণবিজ্ঞপ্তি দিলেও কোনো শিক্ষার্থীই তদন্ত কমিটির কাছে আসছেন না তথ্য দিতে। হলে অভিযুক্ত তিনজন অবস্থান করায় গণরুমসহ অন্যান্য ছাত্রীরা অভিযোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের আশংকা তথ্য প্রমাণসহ সাক্ষী দিতে গেলে পরবর্তীতে অভিযুক্তদের টার্গেটে পরিণত হতে হবে।
জানা যায়, অভিযোগ রয়েছে অন্তরা ও তাবাসসুম ছাড়াও আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী, মোয়াবিয়া জাহান সেই রাতে নির্যাতনে অংশ নিয়েছিলেন। তারা সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গণরুমে অন্যান্য ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য বের হয়।
তবে অভিযুক্ত মীম নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি নির্যাতনের সময় ছিলাম না। আমার রুমেই ছিলাম। শুধু অন্তরা আপুর নির্দেশে ওই মেয়েকে ৩০৬ নম্বর রুম থেকে দোয়েল-১ নামক গণরুমে রেখে চলে আসি।
গণমাধ্যমে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সংবাদ প্রচারিত হলে তদন্ত কমিটির মুখোমুখি করা হয় তাদের। গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের করা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডলের কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
কার্যালয়ে অন্তরা, তাবাসসুমসহ এই তিনজনের মুখোমুখি করা হয় ভুক্তভোগী ফুলপরীকে। এসময় তারা ফুলপরীর কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চান বলে জানিয়েছেন ফুলপরী।
তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠলেও তাদেরকে এখনও কেন হলে রাখা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড শামসুল আলম বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনায় ২ জনকে বাইরে রাখা হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এছাড়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
এদিকে এ ঘটনায় তদন্ত কাজের স্বার্থে তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল তদন্ত কমিটি। গত ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডলের কাছে এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রমাণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকে যে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।
জানা যায়, উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়ার পরও ছাত্রীদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। যার ফলে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তিতে কমিটির কাছে এ ঘটনা সংক্রান্ত কোনো তথ্য মেলেনি। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. রেবা মণ্ডল এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে হলের ছাত্রীরা জানান, যারা গণরুমে ছিল তাদের সবসময় নজরবন্দিতে রাখা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজন এখনও হলে অবস্থান করছেন। তারা এ বিষয়টি নিয়ে সার্বক্ষণিক তৎপর। হল প্রশাসন বা তদন্ত কমিটির দেওয়া আশ্বাসে তারা আশ্বস্ত হতে পারেনি।
অহেতুক কেউ ঝামেলায় জড়াতে চান না বলেও জানান ওই রাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ছাত্রীরা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো ঘটনায় তদন্ত কমিটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অধিকাংশ ঘটনার সমাপ্তি হয় তদন্ত কমিটির মধ্যে দিয়ে। কখনও সে কমিটির প্রতিবেদন সামনে আসে না। এতে অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে আবার স্বরুপে ফিরে আসে। এ ঘটনার সমাপ্তি এমন হবে বলে তাদের ধারণা। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলায় জড়াতে তারা তদন্ত কমিটির কাছে মুখ খুলতে চাইছেন না।
তাছাড়া এ আতঙ্কে গণরুমের অনেক শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করে বাসায় চলে যান। এখনো তারা ক্যাম্পাসে ফেরেনি। জানা গেছে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিডিয়া কিংবা তদন্ত কমিটির মুখোমুখি যাতে না আসতে হয় তারা এখনও হলে ফিরছেন না।
উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া না পাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড শেলিনা নাসরিন বলেন, আমার মনে হয় কেউ ঝামেলায় জড়াতে চায় না তাই তথ্য দিচ্ছে না। যদি কোনো তথ্য দেয় সেটার প্রমাণ দিলে তথ্যটা আরও মজবুত হয়। কিন্তু এই প্রমাণ দেওয়া থেকে অনেকে দূরে থাকতে চায়। তাই হয়তো তারা তথ্য দিচ্ছে না। এটা আমার অনুমান।
সেদিন ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা গণরুমের অন্যান্য ছাত্রীরা উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি সাপেক্ষে তদন্ত কমিটির কাছে কেনো মুখ খুলছেন না? নাম পরিচয় গোপন রাখার আশ্বাস পাওয়ার পরও সাক্ষ্য দিতে আসলে তারা কিসের ভয় পাচ্ছে?
এসব বিষয়ে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড শামসুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিজেও আসলে জানি না।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ