সারাদেশে দেশের সব বিভাগে মে দিবস পালিত

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা-উপজেলায় মহান মে দিবস পালিত হয়েছে। ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক নীতি আদর্শ বজায় রাখতে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার নিয়ে রাজধানীতে শ্রমিক সংগঠনগুলো কর্মসূচি পালন করছে।
ভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মানববন্ধনের আয়োজন করে। দেশের বিভাগগুলো থেকে জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে- রাজশাহীতে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতের দাবিতে মে দিবস পালিত হয়েছে। সোমবার (১ মে) দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকেই নগরীতে বিভিন্ন শ্রমিক, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা ও পথ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বেলা ১১ টায় নগরের সাহেববাজারে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সমাবেশ ও শোভাযাত্রা বের করা হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, আজ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা। একদিকে তাদের আয় নাই। অন্যদিকে আয় ৪০ ভাগ কমে গেছে। রাজশাহীর পাটকল, চিনিকল, সুতাকল বন্ধ হয়ে গেছে। বহু কষ্টে রেশম কারখানা চালু আছে। রেশম কারখানার শ্রমিকরা ঠিকমতো বেতন পাচ্ছে না।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রাজশাহী ল্যাবরেটরি স্কুলের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এছাড়া রাজশাহী ইমারত শ্রমিক ইউনিয়ন, বস্ত্র কর্মচারী ইউনিয়ন, জনতা ব্যাংক কর্মচারি ইউনিয়ন এবং সিপিবি মহানগরীতে পৃথক শোভাযাত্রা বের করে।
খুলনায় বর্ণাঢ্য র‌্যালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে মহান মে দিবস পালিত হয়েছে। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’।
দিনটি উপলক্ষে খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তর চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, মহান মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের অন্যতম দিন। শ্রমিকরাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করেছে। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা এবং সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন শ্রমিকবান্ধব। তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে শ্রমিকনীতি গঠন করেছিলেন। তারই পথ অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেহনতি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। এ সরকারের আমলেই সকল সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে উন্নত কর্ম পরিবেশ, মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক স্থাপন, শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সুস্থতাসহ সার্বিক অধিকার নিশ্চিতকরণের কোন বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. শহিদুল ইসলাম ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সাজিদ হোসেন। খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার দপ্তরের উপপরিচালক মো. ইউসুপ আলী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান রুনু ইকবাল বিথার, বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি শেখ আব্দুল বাকী, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএম জাফর ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রণজিত কুমার ঘোষ, খুলনা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অদিধপ্তরের উপমহাপরিদর্শক ডা. নবীন কুমার হাওলাদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলমগীর কবির ও সাংবাদিক মুন্সি মো. মাহবুব আলম সোহাগ। বিভাগীয় শ্রম দপ্তর ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মেয়র খুলনা জেলার প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা এবং সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে বরাদ্দকৃত নয়জন সুবিধাভোগীর মাঝে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করেন।
ফেনীতেও মে দিবস পালিত হয়েছে। শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি প্রতিপাদ্যে দিবসটি উপলক্ষে ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শ্রমিকদের আন্দোলন সফল হতে হলে, তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে হলে অন্যতম উপায় হলো শিক্ষা। শ্রমিকদের শিক্ষিত হতে হবে। তবেই কোনো শ্রমিক শোষণ, নিপীড়ণনও বঞ্চনার শিকার হবে না।
জেলা প্রশাসক বলেন, শ্রমিকদের শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাদের মধ্যে শিক্ষার আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। টার্মিনালে কিংবা গার্মেন্টসে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের অধিকারের বিষয়ে শ্রমিকদের ধারণা দিতে হবে। তবেই শ্রমিকরা তারা তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে। শ্রমিক নেতারা শুধুমাত্র নেতা হওয়ার জন্য আন্দোলন না করে নিজেরা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করে তবেই শ্রমিকদের সঠিক অধিকার বাস্তবায়ন হবে। শ্রমিক নেতা হলে তারও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য শ্রমিক নেতা হলে হবে না। নেতাকেও শিক্ষিত হতে হবে। এবং সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে হবে।
সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন দেশ স্মার্ট হবে। মালিক শ্রমিকদের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না। সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে। এ সময় তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মালিক শ্রমিককে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপান্তর করতে হলে মালিক শ্রমিকদের ঐক্য বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে শ্রমিকরা টাকা পায়। এ সময় তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মালিক শ্রমিকদের একযোগে কাজ করতে আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএসআর মাসুদ রানা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী, স্টারলাইন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান পরিবহন নেতা জাফর উদ্দিন, পরিবহন নেতা আজম চৌধুরী, শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারীসহ অন্যান্য সেক্টরের নেতারা।
এর আগে মে দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‍্যালিটি শহরের মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। এতে পরিবহন, হোটেল শ্রমিক, দোকান শ্রমিক সহ বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ