লামা সদরে সড়কের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

মিজানুর রহমান, লামা (বান্দরবান) থেকে >>>
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বলিয়ারচর এলাকায় কাঁচা সড়কটির দীর্ঘদিনেও কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই কাঁদা মাটিতে একাকার হয়ে যায়।  ফলে ভোগান্তিতে রয়েছেন ওই এলাকার অন্তত ৪ হাজারেরও অধিক মানুষ।  পাকা রাস্তা না থাকায় যুগযুগ ধরে এখনো পর্যন্ত মাটির রাস্তায় চলাচল করছেন তারা।  মেরামতের অভাবে তাও এখন চলাচল অযোগ্য।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাজীর দোকান থেকে বরিশাল পাড়া পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা।  সড়কটি এ এলাকার মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  তাছাড়া প্রতিদিন শত শত পাহাড়ি-বাঙালি, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ এই রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করেন।  দীর্ঘ কয়েক যুগ আগে নির্মিত এই মাটির সড়কটি কখনো সংস্কার হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  তবে চলতি বছর এলাকার যুবকদের সমন্বয়ে গঠিত বান্দরবান লামা সদর ইউনিয়ন কল্যাণ নামে সমিতির সদস্যরা এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে কিছু বালু-মাটি দিয়ে মেরামত করলেও মালবাহী ট্রলি ও ট্রাক্টরের কারণে তা তলিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
বলিয়ারছর বাজার ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের মাধ্যম ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্রা ও সিএনজি অটোরিকশা।  অনেক কষ্টে ভাঙাচূরা রাস্তায় বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করে এলাকার মানুষ।  বর্ষা শুরু হলেই বন্ধ হয়ে যায় ওই সব যানবাহন।  ফলে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়।  মাঝেমধ্যে মোটরসাইকেল আসলেও দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয় আমাদের।  সামান্য বৃষ্টি হলে কাঁদামাটিতে একাকার হয়ে যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পরে সড়কগুলো।
স্থানীয় মো. জহির হোসেন দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, দীর্ঘদিন এই রাস্তার উন্নয়ন বা সংস্কার করা হয়নি।  বৃষ্টি হলে রাস্তার অবস্থা নদীর মতো হয়ে যায়।  দূর থেকে তাকালে নদী মনে হয়।  রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচল করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।  সড়কের বেহাল দশার কারণে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীদের চরম কষ্টে প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়।  এখানে ভোগান্তির শেষ নেই।  সবদিক বিবেচনায় এই সড়কগুলো অতি দ্রুত উন্নয়ন করা দরকার।  রাস্তাটি উন্নয়ন বা সংস্কার হলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ শেষ হবে।
সড়কের এ বেহাল দশা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় আবুল কাশেম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমার ৩৭ বছর বয়সেও এমন রাস্তা দেখিনি।  যখন এ এলাকায় রাস্তা ছিলোনা তখনোও এমন অবস্থা ছিলনা।  তিনি আরো বলেন, ভাই, কতো রাস্তাই তো ঠিক হয়, কিন্তু আমাদের এ রাস্তাটা ঠিক হচ্ছে না কেন?  বছরকে বছর ধরে এভাবেই পড়ে আছে।  দীর্ঘদিন থেকে চলাচলে অনুপযোগী এই সড়কে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকেই।  সড়ক তো নয় যেন মরণ ফাঁদ।  এটা সংস্কার করে চলাচল যোগ্য করে তোলার প্রত্যাশা আমাদের।
ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. আব্দুল হাফিজ দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটি ভেঙে বড় বড় গর্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।  সড়কের বেহাল দশার কারণে কৃষক ও মানুষতো দুরের কথা অসুস্থ রোগী, বিশেষ করে গর্ভবতী রোগীদের নিয়ে পড়তে হচ্ছে বিপাকে।  তাছাড়াও মালামাল পরিবহনে দিতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া।  এটা বিশাল বাজেটের রাস্তা, সুতরাং সরকারি বাজেট ছাড়া ব্যক্তিগত বাজেট দিয়ে সম্ভব নয়।  তাছাড়া চেয়ারম্যান মহোদয় এই সড়কের টেন্ডার হয়েছে বলে জানিয়েছেন।  কিন্তু লকডাউনের কারণে এবিষয়ে আর কথা হয়নি।
এবিষয়ে সদর ইউপির চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, সড়কটি সংস্কারে বাজেট অনুমোদন হয়েছে।  তবে সাম্প্রতিক করোনার কারণে কাজ পিছিয়ে গেছে।  করোনা তথা লকডাউন শেষ হলে সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

ডিসি/এসআইকে/এমআর