লাশ দাফনের জায়গা নেই টিক্কারচর কবরস্থানে, কোদাল মারলেই বেরিয়ে আসছে লাশ-হাড়-কঙ্কাল

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বৃহত্তর কুমিল্লায় অজ্ঞাত লাশের দাফনের জন্য নির্ধারিত একমাত্র কবরস্থান টিক্কারচর কবরস্থান।  প্রতিনিয়ত যে হারে অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা বাড়ছে, সে হারে আর কবর দেয়া যাচ্ছে না এই কবরস্থানটিতে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে- ২০০১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৬৪০টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।  লাশের সংখ্যা বাড়লেও নগরীর টিক্কারচর কবরস্থানে দাফন করা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিড়ম্বনা।  নতুন কবর খনন করতে গিয়ে কোদাল চালালেই উঠে আসছে পুরোনো লাশ, হাড় কিংবা কঙ্কাল।
পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী।  পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হলে উদ্ধার হওয়া লাশের ছবি তুলে ও ময়নাতদন্ত করে দাফনের জন্য কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড রোডের আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে পাঠানো হয়।  পরে সেই লাশ দাফনের জন্য নেয়া হয় টিক্কারচর কবরস্থানে।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কুমিল্লা শাখার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশন বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য যে জায়গা দিয়েছে তা খুবই সামান্য।  তাই পুরুষ ও নারীর কবর দেয়ার জন্য ইসলামী শরিয়া মোতাবেক যেটুকু কবর খনন করার কথা তা সেখানে সম্ভব হয় না।  কবর খনন করতে কোদাল চালাতেই মাটির নিচ থেকে পুরোনো লাশ, হাড় কিংবা কঙ্কাল উঠে আসে।
সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল হাসেম বলেন, নগরীর একাধিক পরিত্যক্ত স্থানের লিজ পেতে পাউবোর সহায়তায় জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।  বিকল্প একটি কবরস্থান না করা গেলে টিক্কারচর কবরস্থানে আর হয়ত লাশ দাফন সম্ভব হবে না।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, টিক্কারচর কবরস্থানের উন্নয়নে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু হবে।  টমছমব্রিজ কবরস্থান বর্ধিত করতে ৬০ লাখ টাকার জমি কেনা হয়েছে।  এছাড়া নগরীতে আরো কয়েকটি কবরস্থান করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শারমীন সুলতানা বলেন, আমাদের মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগে এখনো ডিএনএ ল্যাব চালু হয়নি।  লাশের পরিচয় শনাক্তসহ অন্যান্য প্রয়োজনে ডিএনএ প্রযুক্তির দরকার হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চাহিদা অনুসারে আলামত ঢামেক কিংবা পুলিশের মালিবাগের ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়।
কুমিল্লার এডিশনাল এসপি (উত্তর) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী বলেন, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচয় শনাক্ত করতে আমরা পিবিআই ও সিআইডির সহায়তা নিয়ে থাকি।  প্রয়োজনে ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়।  লাশ বিকৃত ও নষ্ট হয়ে গেলে অনেক সময় প্রযুক্তির মাধ্যমেও কাজ হয় না।
নানান চ্যালেঞ্জ আর প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকায় উদ্ধার করা লাশের পরিচয় না মেলাতে পারায় অজ্ঞাত হিসেবে লাশগুলো দাফন করা হয় টিক্কারচর কবরস্থানে।  অতিদ্রততার সাথে কবরস্থানের পরিধি কিংবা নতুন কবরস্থান নির্ধারণ করা না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএ