১৫ জুনের নির্বাচন অনেক কিছুর পরীক্ষা নতুন ইসির জন্য

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
নির্বাচনি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার অংশ হিসেবে ভোটের তারিখের ১ মাস ৩ দিন আগেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায়।  ভোটের এক মাস আগেই করা হয় বিজিবি সদস্য মোতায়েন।
দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।  কুমিল্লা সিটিতে অনুষ্ঠেয় সে নির্বাচনের আগে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন কে এম নূরুল হুদার উত্তরসূরি।
সীমানা জটিলতা ও সময় স্বল্পতার কারণে অনেকটা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েই ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে আউয়াল কমিশন, তবে তারিখ ঘোষণার পর অতিদ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় বেশ প্রশংসিত হচ্ছেন সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা।
বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশনের সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়লেও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়ার ঘটনা ঘটেছে।  আগের কমিশনের সময়কার পরিস্থিতি ঠেকাতে ভিন্ন পথে হাঁটছে বর্তমান কমিশন।
নির্বাচনি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার অংশ হিসেবে ভোটের তারিখের ১ মাস ৩ দিন আগেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায়।  পাশাপাশি ভোটের এক মাস আগে করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন।  ভোটকেন্দ্র ও বুথগুলোয় ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নির্বাচনি আচরণবিধি যাতে কোনোভাবে লঙ্ঘন না হয়, সে বিষয়টি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।  সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যেন থাকে, সেটা কমিশন নিশ্চিত করতে চাইছে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ফেমার প্রধান মুনিরা খান বলেন, যেকোনো নির্বাচন কমিশনই আসে না কেন, প্রথমে তারা সর্বশক্তি এবং সদিচ্ছা দিয়ে নির্বাচন আয়োজন করে, তবে ভালো নির্বাচনের ধারাবাহিকতা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার জন্য সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম কুমিল্লা সিটির নির্বাচনকে পরীক্ষা বলতে নারাজ।  এটিকে প্রথম নির্বাচনি কার্যক্রম বলতে চান তিনি।  ভোটের এক মাস আগেই বিজিবি মোতায়েন, কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগকে প্রশংসায় ভাসাতে চান না এ কমিশনার।
কুমিল্লাকে দেখে অন্যান্য সিটি নির্বাচনের সময় এক মাস আগেই বিজিবি মোতায়েনের চাহিদা সৃষ্টি হবে কি না, সে প্রশ্ন করেছেন তিনি।
কুমিল্লার এই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেন, ‘এ বিষয়গুলো এককথায় বলা কঠিন।  আমরা চেষ্টা করব। আমাদের কাজকর্ম দেখেন না।  পরবর্তী সময়ে আপনারা বুঝতে পারবেন, আমরা কী করতে যাচ্ছি।  শেষ পর্যন্ত দেখেন। তারপর আপনারাই মন্তব্য করবেন, আমরা কী করি না করি’।
নির্বাচনি আচরণবিধি যাতে কোনোভাবে লঙ্ঘন না হয়, সেটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যেন থাকে, এটা ইলেকশন কমিশন নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।  এ ভোটে কোনো সমস্যা হবে না’।
ভোটের এক মাস আগে বিজিবি মোতায়েন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকেই।  পরশু দিন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন’।
সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না।  এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি নির্বাচন কমিশনের কাজ না।  নির্বাচন কমিশনের কাজ হলো অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা।  কে এলো আর না এলো, সে দায় নির্বাচন কমিশনের না’।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, এক মাস আগে কুমিল্লায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে, তবে একই দিনে ইউনিয়নগুলোয় যে ভোট হচ্ছে, সেগুলো কি কম গুরুত্বপূর্ণ?  জাতীয় নির্বাচনের এক মাস আগে সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন সম্ভব হবে কি না সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘তখন হয়তোবা সম্ভব হবে না।  আবার এ জন্য বিপুল অর্থ খরচ হয়।  অন্যান্য সিটি নির্বাচনের সময় তখন এক মাস আগেই বিজিবি মোতায়েনের চাহিদা সৃষ্টি হবে, তখন যদি তা না করা যায়, তাহলেই তো প্রশ্ন উঠবে।
কুমিল্লা সিটির ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এতগুলো সিসি ক্যামেরা একসঙ্গে মনিটর করা দুষ্কর হয়ে যাবে।  সেটা সম্ভব হবে না।  গোপন কক্ষে তো ক্যামেরা থাকবে না।  আবার কেউ যদি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ঝামেলা বাধায়, তাহলে তো নির্বাচন বন্ধ করে দিতে হবে।  তাহলে আপনি এক নির্বাচন কতবার করবেন?’
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ফেমার প্রধান মুনিরা খান বলেন, ‘প্রথম নির্বাচনটা সদিচ্ছার সঙ্গেই করবেন।  প্রথমে কেউ বিতর্কিত হতে চায় না।  প্রথম নির্বাচন যখন ভালোভাবে করে, তখন যখন দেখে কতটুকু তাদের ক্ষমতা, কোথায় গ্যাপ আছে।  কোথায় নেই দেখার জন্যই তারা সুন্দর একটা ইলেকশন করতে চায়।  এই নির্বাচন কমিশনের সেই সদিচ্ছা থাকবে এবং থাকা উচিত’।
প্রথম নির্বাচন বিতর্কিত হলে পরেরগুলো সুষ্ঠু হলেও জনগণ কমিশনের প্রতি ইতিবাচক হবে না বলে মনে করেন তিনি।  কুমিল্লা সিটির মতো সামনের নির্বাচনে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে কি না জানতে চাইলে এই পর্যবেক্ষক আরও বলেন, ‘সেটা ডিপেন্ড করে পরিস্থিতির ওপর এবং কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়।  দলীয় সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে সেই সরকারের সদিচ্ছা যুক্ত হবে।  দলীয় সরকারের প্রচেষ্টা ও সদিচ্ছা এবং ইলেকশন কমিশনের সদিচ্ছা ও প্রয়াস যুক্ত হলে ভালো নির্বাচন হয়।  সরকার যদি মনে করে আমাদের জনপ্রিয়তা আছে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তারা ভালো নির্বাচন দেবে’।
আগামি ১৫ জুন কুমিল্লা সিটিতে ভোটের পাশাপাশি দেশের ১৩৫ ইউনিয়ন, ছয় পৌরসভা ও এক উপজেলায় ভোট হবে।  এসব স্থানে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএমে)।  ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, কুমিল্লা সিটিতে মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ১৭ মে, বাছাই ১৯ মে, আপিল ২০, ২১, ২২ মে।  এ ছাড়া আপিল নিষ্পত্তি ২৩ থেকে ২৫ মে।  প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মে।  প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২৭ মে।
দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়।  ওই বছরই প্রথম নির্বাচন হয়।  পরে ২০১৭ সালে এসে এ সিটিতে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদকে অন্তর্ভুক্ত করে আয়তন বাড়ানো হয় প্রায় তিন গুণ।  এতে দেখা দেয় সীমানা জটিলতা।  বর্তমানে এই সিটিতে ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ