কুমিল্লার ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে দুশ্চিন্তা কাটছে না, নেপথ্যে বাহার-আফজল বলয়!

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
কুমিল্লা শহরে ভোট এলেই আওয়ামী লীগে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার-আফজল বলয়ের ভূমিকা নিয়ে যে আলোচনা থাকে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।  ২০১২ ও ২০১৭ সালের সিটি ভোটে বড় পরাজয়ের পর এবার নগরের দখল নিতে ক্ষমতাসীন দল বেছে নিয়েছে বাহার বলয়ের নেতা আরফানুল হক রিফাতকে।
এর আগে প্রথম নির্বাচনে আফজল খান ও দ্বিতীয়বার তার মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে প্রার্থী করে পরাজয় বরণ করতে হয় আওয়ামী লীগকে।
আফজল খান গত বছর করোনায় মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পর সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নেতৃত্বাধীন বলয়ই দৃশ্যত কুমিল্লায় এখন ক্ষমতাসীন দলে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা।  তারপরও বুধবারের ভোটকে ঘিরে আফজল বলয়ের ভূমিকা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে দুশ্চিন্তা কাটছে না।
আফজলের ছেলে মাসুদ পারভেজ ইমরান নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।  তবে ২৬ মে নৌকার প্রার্থী রিফাতের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে তিনি ভোট থেকে সরে দাঁড়ান।  এবার প্রচারের পাট চুকিয়ে যখন ভোটের রায়ের অপেক্ষা, তখন বিএনপি ও আওয়ামী লীগে বিভেদের বিষয়টি নিয়ে নানা সমীকরণ।
নব্বইয়ের দশক থেকেই দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ বাহারকে বেছে নিলে আফজল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।  আবার আফজলকে বেছে নিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাহার।  বাহার সংসদ সদস্য হওয়ার পর আফজলকে সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে সমর্থন দেয়া হলেও তিনি দলের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন পাননি বলে সে সময় গণমাধ্যমে এসেছিল।  মেয়ে সীমাকে প্রার্থী করা হলে তিনিও আওয়ামী লীগের একটি অংশের সমর্থন পাননি বলে ভোট শেষে সমীকরণে উঠে আসে।
এবারের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও পরোক্ষভাবে সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই হচ্ছে।  বিরোধী দলটির নেতা মনিরুল হক সাক্কু সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন, যার শক্তি বিএনপিরই কর্মী-সমর্থক।  অবশ্য সাক্কু এবার নিজ দলের বিরোধিতাতেও পড়েছেন।  স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে নিজামউদ্দিন কায়সারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন, যার ভোটে দাঁড়ানোর মূল লক্ষ্য সাক্কু ঠেকাও বলেই ধারণা করা হয়।
এই দিক থেকে রিফাতের নির্ভার থাকার কথা থাকলেও আফজল বলয়ের ভূমিকা কী হয়, সেটিকেও রাখতে হচ্ছে ভাবনায়।
কুমিল্লায় আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত সেখানে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছে কি না।  নৌকার জন্য মনোনয়নবঞ্চিতরাই বা এ কয়দিনে কী করেছেন।
গত শুক্রবার মনোনয়নবঞ্চিত ১৩ নেতাকে রিফাতের হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।  বিষয়টি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর।  এরপর থেকে নেতাদের কেউ কেউ ভোট চাইতে বের হয়েছেন।  তবে বেশির ভাগই ছবি তুলে দায়সারা প্রচার চালিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন।
আবার শুক্রবার নৌকার পক্ষে নামলেও শনিবার তাদের কাউকে মাঠে দেখা যায়নি।  রবিবার কেউ কেউ প্রচারে নামেন।
কী বলছে জেলা আওয়ামী লীগ
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠন শতভাগ মন দিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করছি’।  নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নমিনেশন জমা দেয়ার দুই দিন পরই রিফাত ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে’।
আফজল খান পরিবারের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর দূরত্ব রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে সাজ্জাদ বলেন, ‘দূরত্ব থাকার প্রশ্নেই আসে না।  যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতো এবং সেখানে প্রার্থী বাহার ভাই হতো, তখন একটা বিষয় ছিল’।
প্রচারে মনোনয়ন বঞ্চিতদের একাংশ
এবার মেয়র পদে নৌকা চেয়েছিলেন মোট ১৭ জন।  এদের মধ্যে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান সোমবার দুপুরে নৌকার পক্ষে প্রচার চালাতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে আহত হন।  আগের দিন আনিসুর রহমান মিঠু, নূর উর রহমান তানিম, মাহবুবুর রহমানকে প্রচার চালাতে দেখা যায়।  তবে বাকিদের অনেকেই এখনও নিষ্ক্রিয়।
রিফাত কী বলছেন
নৌকা পাওয়া আরফানুল হক রিফাত অবশ্য দাবি করেছেন, তাকে জেতাতে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ।  দলে কোনো বিভেদ নেই।  তাই নৌকার জয় হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ