‘ভাসানচর দেখে সন্তুষ্ট, ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের বোঝাবো’

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর বসবাসের উপযোগী কিনা, তা দেখা শেষে মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে ফিরবেন রোহিঙ্গা নেতারা।  তারা ক্যাম্পে পৌঁছে শরণার্থীদের কাছে ভাসানচরে তৈরি করা আবাসন ব্যবস্থাপনার নানা দিক তুলে ধরবেন এবং অন্তত প্রত্যেক ক্যাম্প থেকে কিছু কিছু রোহিঙ্গা পরিবার যেন সেখানে যায় সে বিষয়ে কাজ করবেন।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ভাসানচরের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মোবাইল ফোনে এসব কথা জানান টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা নেতা হেফজুর রহমান।  তিনি বলেন, ‘সোমবার দ্বিতীয় দিনে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ভাসানচরে গরু, ছাগল, মুরগি খামার ঘুরে দেখেছি।  তাছাড়া যেভাবে ভাসানচরের চারপাশে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, তা হেঁটে দেখেছি।  সব মিলিয়ে দুই দিনে ভাসানচরে ঘুরে দেখে মনে হলো, সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের গড়ে তোলা অবকাঠামোগুলো মজবুত ও খুবই সুন্দর।  এখানে ভিজিটে আসা সব রোহিঙ্গা নেতার এ ব্যবস্থাপনা পছন্দ হয়েছে।  তাছাড়া মানুষ বসবাসে যেসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দরকার সেগুলোও এখানে রয়েছে।  যেটি এখানে আসার আগে ধারণার বাইরে ছিল’।
ভাসানচর পরিদর্শনে যাওয়া রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে তারা সবাই কক্সবাজারের ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে ভাষানচর ত্যাগ করবেন।  তাই সোমবার সন্ধ্যায় তাদের একটি কক্ষে নিয়ে সেখানকার কর্মকর্তারা একটি ছোট ব্রিফিং করেন।  সেখানে তাদের, ভাসানচরে যা যা দেখছেন তা সঠিকভাবে যেন স্ব-স্ব ক্যাম্পে ফিরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে তুলে ধরেন সে বিষয়ে বলা হয়।  কাউকে বিভ্রান্তিমূলক কোনো তথ্য উপস্থাপন না করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।  শেষে তাদের প্রত্যেকের হাতে উপহার তুলে দেওয়া হয়’।
এদিকে সরকার ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে কমপক্ষে ১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ওই দ্বীপে পাঠানোর অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেয়।  এজন্য রোহিঙ্গা নেতাদের একটি দলকে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় গত শনিবার টেকনাফ থেকে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার।  প্রতিনিধি দলটি চট্টগ্রাম হয়ে শনিবার বিকাল ৫ টার দিকে ভাসানচরে পৌঁছায়।  তাদের ভাসানচরে কী কী ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা জানানো হয়।  এরপর তাদের (রবিবার ও সোমবার) দুই দিন পুরো আবাসন প্রকল্পের অবকাঠামো ঘুরিয়ে দেখানো হয়।  এ সময় তাদের সঙ্গে নৌবাহিনী, পুলিশসহ আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভাসানচর থেকে মোবাইল ফোনে আরেক রোহিঙ্গা নেতা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘দুই দিনে ভাসানচরে অবকাঠামো দেখা শেষ হয়েছে।  এখান থেকে মঙ্গলবার ফিরে সেখানকার অবকাঠামো এবং সুন্দর পরিবেশের বিষয়ে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের জানানো হবে।  তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে অন্তত প্রতি ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছায় যাতে কিছু কিছু পরিবার সেখানে যায় তা নিশ্চিত করা।  রোহিঙ্গা নেতারা সেখানকার খাদ্য গুদাম, থাকার ঘর, আশ্রয় সেন্টার, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, খেলার মাঠ ও কবরস্থানসহ মাছ চাষের পুকুর পরিদর্শন করেছেন।  এছাড়া সেখানে বিভিন্ন ধরনের সবজির বাগান এবং সাগরের তীরে কেওড়া বাগান দেখে মুগ্ধ হন তারা’।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, ‘মঙ্গলবার ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দল ফিরে আসবে।  এরপর তারা নিজ নিজ ক্যাম্পে পৌঁছে ভাসানচরে যা দেখেছে তা রোহিঙ্গাদের মধ্যে তুলে ধরবে।  আমাদের বিশ্বাস, রোহিঙ্গা নেতারা তাদের ভাসানচরে যেতে রাজি করাতে সফল হবেন’।
এ বিষয়ে হাতিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) গোলাম ফারুক বলেন, দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা ভাসানচরের চারদিক ঘুরে দেখেন।  মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে তারা ভাসানচর ত্যাগ করবেন।
সেনাবাহিনীর রামু-১০ পদাতিক ডিভিশনের মুখপাত্র মেজর ওমর ফারুক জানান, ‘তাদের স্ব-স্ব ক্যাম্পে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে’।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার।  জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।  গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়।  বাড়তি টাকা বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিসি/এসআইকে/এফআর