ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হবে না : ডিআইজি আনোয়ার

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বিতর্কিত সব সদস্যকে বদলি ও নতুন সদস্যরা দায়িত্ব নেওয়ার পর টেকনাফ থানা পরিদর্শন করছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।  কক্সবাজারের টেকনাফে আবারও বেড়ে গেছে মাদক ব্যবসা।  এ কারণে টেকনাফ উপজেলায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নতুন তালিকা করা হবে।  কোনো মাদক কারবারিকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে টেকনাফ মডেল থানা পরিদর্শন এসে সাংবাদিকদের একথা বলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।  তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ী যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো, মাদক সেবনকারী ও মাদক ব্যবসায় আইনের দৃষ্টিতে দুটোই অপরাধ।  এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  আমরা যেহেতু নতুন মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা রিভিউ করবো, তাদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন আমরা তাই করবো।  নতুন তালিকা করে ইতোপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল, কী মামলা আছে, কার কী প্রোফাইল সব কিছু যাচাই করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, টেকনাফে সিনহার ঘটনাটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা।  মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান ‘হত্যাকাণ্ডের’ মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যেই পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করবে।  আমরা আইনের প্রয়োগ করবো, কীভাবে আইনের প্রয়োগ করবো সেটি আইনের মধ্যে বলা আছে।  আমরা সকল কাজই করবো, তবে আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে।
তিনি বলেন, টেকনাফ থানা থেকে একসঙ্গে সবাই বদলি হয়েছেন।  এখন কনস্টেবল থেকে এসপি পর্যন্ত যারা আছেন সবাই নতুন।  নতুনভাবে যারা যোগদান করেছেন তাদের মনোবল বৃদ্ধি করা এবং পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্বপালন করার জন্য উৎসাহ দিতে এসেছি।  শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশের যে ভূমিকা আছে সেটি পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করবে নতুন টিম।  অপরাধ প্রবণতা দূর করতে সবাই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত আছে।  আসার আগে সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন।  মাদকসহ অন্য সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  ক্ষেত্র বিশেষে পেট্রোলিং বাড়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার দায়িত্বপালন সময়ে কোনো কর্মকর্তার ঘুরে ফিরে এক জায়গায় থাকার ট্র্যাডিশন থাকবে না।  তবে চাকরি করতে এসে এক থানার পাশের থানায় চাকরি করতে পারবে না এমন বিধি-নিষেধ নেই, তা আইনেরও লঙ্ঘন হওয়ার মতোও বিষয় নয়।  যেহেতু বিষয়টা আলোচনা-সমালোচনায় এসেছে নিশ্চয় আইনের ব্যতয় ঘটেছে।  তাই ঘুরে ফিরে দায়িত্বপালন করতে দেওয়া হবে না।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে এপিবিএন এর দুইটি ব্যাটালিয়নের পাশপাশি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সেখানে দায়িত্বে আছে।  সবার সাথে সমন্বিত ভাবে মাদক ও আইন শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।  এছাড়া সেখানে যৌথ টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী’।
ডিআইজি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো কারণে কিছুটা শিথিল হয়েছিল পুলিশের কার্যক্রম।  আশা করছি, সেই শিথিলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠবে জেলা পুলিশের নতুন টিম।
এসময় কক্সবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শাকিল আহমেদ ও টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমানসহ সকল অফিসার ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, থানা নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের জায়গা।  ভালো লোকের মর্যাদা দেওয়া হবে, এখানে কোনো দালাল-টাউটকে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না।  দালালরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় পাবে না।  তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে কী হয়েছে আমাদের জানা নেই, আমাদের নতুন মিশন শুরু।  সর্বোত্তম সেবার প্রত্যয় নিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে আমরা কাজ করবো।  থানা হবে সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা।  সেভাবে কাজ শুরু করছি’।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান।  এ ঘটনায় কমিউনিটি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠে।  ফলে এ ঘটনার পর পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা-প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।  জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজাতে একযোগে সব সদস্যকে বদলির সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশের সদর দফতর।

ডিসি/এসআইকে/এফআর