দ্বিতীয় ধাপে ভাসানচরের পথে ১১৩৪ রোহিঙ্গা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবির থেকে দ্বিতীয় দফায় স্বেচ্ছায় ভাসানচরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে ১ হাজার ১৩৪ জন রোহিঙ্গা।  সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে চট্টগ্রামের পথে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে ১৩টি বাস।  এরপর বেলা ৩ টার দিকে আরও ১০টি বাস রওনা দেয়।
আগের মতো উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে তিন দলে ভাগ করে বাসগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।  উখিয়ার মূল ক্যাম্প ছাড়াও পুরো ৩৪টি ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা ট্রানজিট পয়েন্টে গতকাল রবিবার বিকেল থেকে আসতে শুরু করে।  বাকিরা সোমবার সকাল ও দুপুরে পৌঁছায়।
এরপর দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে ১৩টি বাসে চড়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে দ্বিতীয় দফার প্রথম টিম।  ছেড়ে যাওয়া প্রত্যেক বাসে ৩০ জন করে সদস্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।  এসব গাড়িবহরের আগে ও পেছনে পুলিশের গাড়ি এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
টেকনাফ নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালংয়ের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝিরা বলেন, এবার প্রথম যাত্রার উল্টো চিত্র দেখা গেছে।  আগেরবার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিতে অনেক বোঝাতে হয়েছে।  কিন্তু ২০ দিনের মধ্যে পাল্টেছে চিত্র।  এবার রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে নিজেরাই তালিকায় নাম লিখিয়েছে।  গত ৪ ডিসেম্বর যাদের আত্মীয়-স্বজন ভাসানচরে গেছে তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধার খবর শুনে অনেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছা পোষণ করেছে।
তারা আরও বলেন, প্রথমববার জোর করে গোপনে বিভিন্ন অপপ্রচার থেকে লুকিয়ে তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে আনা হয়েছিল, এবার সেরকম নয়।  বিকেলে অনেকেই প্রথম যাত্রার যাত্রী হতে ক্যাম্পে এসে পড়ে।
জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের তালিকাভুক্ত (রেজিস্টার) ক্যাম্প ছাড়া বাকি সব ক্যাম্প থেকেই যাচ্ছে রোহিঙ্গারা।  উখিয়ার কুতুপালং-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৮ ডব্লিউ ক্যাম্প থেকে যাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার।  উখিয়ার কুতুপালং-৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে ২৭ পরিবার যাবে।  কুতুপালং-২ ডব্লিউ থেকে যাবে ২৪ পরিবার।  উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (ইস্ট) মাঝি আবুল কালাম বলেন, ‘আমার ব্লক থেকে কয়েকটি পরিবার ভাসানচরে যাচ্ছে।  তাদের কাউকে জোর করা হয়নি’।
একই ক্যাম্পের সাবেক মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, এ ক্যাম্প থেকে আবদুস সালাম ও আবুল হাশেম মাঝির পরিবারসহ বেশকিছু ঘর নোয়াখালীর ভাসানচরে যাবে।  প্রথম দফায় যারা গেছে, তাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধার খবর জেনেই নতুন করে অনেকেই যেতে আগ্রহী হয়েছে।  তিনি বলেন, ‘যারা যাচ্ছে তারা বলছেন, মিয়ানমার যে তালবাহানা শুরু করেছে তাতে সহসা নিজ দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই।  সুতরাং আশ্রিত জীবনে বাংলাদেশ সরকার যেখানেই রাখে তাতো একই রকম।  সেখানে পাহাড়ি ঝুপড়ির চেয়ে দ্বীপের দৃষ্টিনন্দন দালান অনেক উত্তম হবে।  একটু জোরে বাতাস হলে চালা উড়ে যাবার ভয়টা অন্তত থাকবে না’।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মাঝে ভেসে থাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।  ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে।  বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার।  তারা ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়।  তারা ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করে।  দু’বছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।  কিন্তু তাদের অনিচ্ছার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না।  অবশেষে এর যাত্রা শুরু হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করছেন।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা ভাসানচরে গেছে।  তারও আগে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে সমুদ্র উপকূলে আটক আরও তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।
ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের অনেকে জানান, তারা ভাসানচর পরিদর্শন শেষে ফিরে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের মুখে সেখানকার বর্ণনা শুনে এবং প্রথম দফায় যাওয়া রোহিঙ্গাদের দেয়া অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সেখানে যেতে রাজি হয়েছেন।  তাদের মতে, পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে।  এছাড়া ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নির্মিত অবকাঠামো অনেক বেশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে মনে করছে রোহিঙ্গারা।
কোনো বলপ্রয়োগ ছাড়াই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার ইতিবাচক মনোভাব দেখে তাদের সেখানে পাঠানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় সরকার।  রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে নিরাপদে ভাসানচরে পাঠাতে পারায় আরও অনেক পরিবার সেখানে যেতে আগ্রহী হচ্ছে বলে মনে করছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক দায়িত্বশীল সূত্র।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ