পলিথিন মোড়ানো কুঁড়ে ঘরে মানবেতর জীবন কোহিনুরের

এম. জুবাইদ, পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি >>>
প্রচণ্ড ঠান্ডা, সাথে উত্তরের শীতল হাওয়া।  পরণে হালকা-পাতলা জামা।  ঠান্ডায় সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।  পলিথিন মোড়ানো কুঁড়ে ঘরে ওদের বসবাস।  ঠান্ডা বাতাস ছেড়া পলিথিন ভেদ করে ঘরে ঢুকছে।  কুঁড়ে ঘরটিতে যেন এসি বসানো হয়েছে।  রাতে মায়ের শাড়ির ছেড়া আঁচলে ঘুমায় কোহিনুরের তিন সন্তান।  এ যেন একটু শান্তি, একটু হালকা গরম পরশ, এভাবেই কাটছে তাদের দিন।
গত বছর ধরে স্বামী দিদারুল ইসলাম নিরুদ্দেশ।  অভাব, অনটন আর একবুক জ্বালা যেন জেঁকে বসেছে।  শত কষ্টের মাঝেও বেঁচে থাকতে চান কোহিনুর আক্তার।
তিন সন্তান হানিফা (৭), মো. ইয়াসিন (৫) ও আলিফা (১)। ওরাই কোহিনুরের একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন।  ওরাই তো পৃথিবীর সমস্ত সুখ, হাসি আর আনন্দ।  ওরা রাতে ঘুমায় মায়ের শাড়ির আঁচলে।  কি আর করবে?  এমন শীতে তো গরম কাপড় জুটেনি তাদের কপালে।  মুজিব শতবার্ষিকীতে ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।  কিন্তু সেই ঘর জুটেনি কোহিনুরের ভাগ্যে।  কনকনে শীত আর ঠান্ডা বাতাস থেকে মুক্তি পেতে মায়ের শাড়ির আঁচল যেন শান্তির পরশ খোঁজার চেষ্টা তিন অবুঝ শিশুর।  এক মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন কোহিনুরের।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা এলাকার দিদারুল ইসলামের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার।  গত ৮ বছর আগে বিয়ে হয় তাদের।  সংসারে ফুটফুটে তিনটি শিশু।  এরই মধ্যে কোহিনুর আক্তারকে ফেলে স্বামী দিদারুল ইসলাম নিরুদ্দেশ হয় দুই বছর আগে।  এক বছর বয়সী শিশু আলিফা তখন মায়ের গর্ভে।  এখনো বাবার মুখ দেখার সুযোগ হয়নি আলিফার।  নানান অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছেন কোহিনুর।  শীতের সাথে সারা রাত যুদ্ধ তাদের।  ঘরে নেই বেড়া।  বেড়ার পরিবর্তে দিয়েছেন পলিথিন।  তাদের নেই শীত নিবারণের বস্ত্র, নেই কেনার সামর্থও।  অন্যের বাড়িতে কাজ করে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন কোহিনুর।  তিনি এখন সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব।  আছে শুধু ফুটফুটে তিনটি শিশু সন্তান।
গত মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ছেড়া পলিথিন মোড়ানো একটি ছোট্ট ঘর।  ঘরের পূর্বপাশে কুমির খাল।  খালের পাশে খাস জমিতে কোহিনুরের কুঁড়ে ঘর।  দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক খোলামেলা।  ঘর লাগোয়া একটি অস্বাস্থ্যকর টয়লেট।  বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই।  নেই কোনো বিদ্যুত সুবিধাও।  উত্তর পাশে সামান্য দূরে একটি বসতবাড়ি।  বাহিরের ঠান্ডা বাতাস ছেড়া পলিথিন ভেদ করছে।
 কোহিনুর বেগম দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, আমার স্বামী তিন শিশুসহ আমাকে ফেলে পালিয়ে যায়।  এনজিও ‘শক্তি’ থেকে ঋণ নিয়ে ঘরটি দুই বছর আগে বেঁধেছি।  খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে আমার।  অন্যের বাড়িতে কাজ করে বাচ্চাদের খাওয়াই।  শীত সহ্য করতে না পেরে রাতে শাড়ির আঁচলে ঘুমায় তারা।  রাতে শীতের যন্ত্রণায় ছোট্ট বাচ্চাদের কান্না থামানো যায়না।  আমি বিত্তবান ও মানবপ্রেমীসহ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

ডিসি/এসআইকে/এমজে