‘যোন পুলিশ ওঁন সরকারি গুন্ডা, পুলিশ সরকারি বাহিনী আর সরকার এখন নৌকার’

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
‘কেউ ভোট কেটে নিতে পারবে না।  নিতে চাইলে নৌকা মার্কা-ই ভোট কেটে নিতে পারবে।  পুলিশ সরকারি বাহিনী আর সরকার এখন নৌকার, সরকার শেখ হাসিনার। কিন্তু সেটাও হতে দেব না।  জনগণ ভোট দিয়ে নৌকাকে জয়ী করবে।  আপনাদের দোয়াতেই এটি সম্ভব’।
কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ আলমের এমন একটি বক্তব্য নিয়ে নেট দুনিয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।  তোলপাড় চলছে পুরো কক্সবাজার জুড়ে।  এলাকার একটি উঠান বৈঠকের ওই বক্তব্যের কিছু অংশের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
গত ১৬ মার্চ রাত ১১ টায় হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাতির ঘোনা এলাকার একটি উঠান বৈঠকে দেয়া ওই ভিডিও বক্তব্যে ৩ নম্বর হলদিয়া পালং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি শাহ আলমকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলতে শোনা যায়, ‘ভোট হঁন জাগাত লইত নদিওম।  লইলে হঁনে লই পারিব?  আঁই লইপাইজ্জুমদে।  কিয়ল্লা লইপাইজ্জুম?  সরকার হাঁর?  শেখ হাসিনার সরকার, নৌকা মার্কার সরকার।  ভোট লইপাইল্ল্যে, জোর গরি পাইল্যে নৌকা মার্কার মাইনষ্যে লই পারিব দে।  নাকি চেদের বেদের চেয়ার মার্কা, গলইস মার্কার মাইনষ্যে লইপারিবদে?  দেশ ইয়ান, সরকারি গুন্ডা ওন হার?  যোন পুলিশ ওঁন সরকারি গুন্ডা।  ওঁন হার? ওঁন নৌকা মার্কার নঁনে?  তই ভোট লইলে নৌকা মার্কার মাইনষ্যে বাইজ্জাই বাইজ্জাই লইবদে?  (ভোট কোনো জায়গায় ছিঁড়ে নিতে দেয়া হবে না।  নিলে কে নিতে পারবে?  আমি পারব।  কী জন্য পারব?  সরকার কার?  শেখ হাসিনার সরকার, নৌকা মার্কার সরকার।  ভোট নিতে পারলে, জোর করতে পারলে নৌকা মার্কার লোকজনে পারবে।  নাকি চেয়ার মার্কা, গ্লাস মার্কার মানুষ পারবে?  সরকারি গুন্ডাগুলো কার?  যেগুলো পুলিশ সেগুলো সরকারি গুন্ডা।  তারা কার?  নৌকা মার্কার।  তাহলে ভোট চাইলে নৌকা মার্কার লোকজন পিটিয়ে পিটিয়ে নিত পারবে’।)
আগের বক্তব্যের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়া একই বৈঠকে আরেকটি বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘ইঁয়া আঁর ভাই যিবা ঢাকা আসছিল ইবা এহন ঢাকা নাই।  ইবা এহন ওয়াশিংটন। ইবা এহন বিশ্ব ব্যাংককর, বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপাল-শ্রীলংকা ইনর- এ পাঁচ দেশর প্রতিনিধিত্ব গরের মানুষ ইঁবা।  আঁর ভাই যিয়ান সেটাপ গরি গিয়ে এদেশত।  যিয়ান ক্ষমতার স্তর তৈরী গরি গিয়ে-বাংলাদেশত ২৯ লক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারির ওপরে যিবায়ে মাস্টরি গরি গিয়ে পাঁচ বছর।  ইয়বার সৈনিক অল, সারিত অল, এদেশত থরে থরে থরে বুআঁই দিয়া।  আরো দশ বছর ইবার সারিত অল এদেশত আছে।  সুতরা্ং আর ক্ষমতা গিয়ে হইয়েদে ইতারা বোকার সর্গে বাস গরেদদে।  আঁর ক্ষমতা আছে, সামনেঅ থাইব।  অঁনারা শুধু দোয়া গরিবান দে।  (আমার ভাই যিনি ঢাকায় ছিলেন তিনি এখন ওয়াশিংটন।  সেখানে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপাল-শ্রীলংকা- এ পাঁচ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।  তিনি ২৯ লাখ সরকারি কর্মকর্তার বস ছিলেন।  তার সহকর্মীরা স্তরে স্তরে দায়িত্বপালন করছেন।  ওনার অনুগতরা আরও ১০ বছর দেশ পরিচালনায় থাকবে।  সুতরাং আমার ক্ষমতা যারা কমে গেছে বলে প্রচার করছে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।  আমার ক্ষমতা আছে, সামনেও থাকবে।  আপনারা শুধু আমার জন্য দোয়া করবেন।)’
প্রচার পাওয়া এসব বক্তব্য নিয়ে নানাজন নানা মন্তব্য করছেন।  কেউ দলীয় লোকজনকে অনুপ্রাণিত করতে উঠান বৈঠকে এমন বক্তব্য রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করলেও অনেকে এটাকে ‘চরম শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বক্তব্য বলে দাবি করেছেন।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ‘নৌকার মনোনয়ন কে পাবে তা দলের নির্বাচনী বোর্ড ঠিক করবে।  ঘরোয়া বৈঠকে নিজস্ব লোকজনকে অনুপ্রাণিত করতে অনেকে অনেক ধরনের বক্তব্য দিতেই পারেন।  সেটা একান্ত ব্যক্তিগত।  দলীয় ফোরামের বাইরে বলা কথা নিয়ে দলের ভেতর হইচই করা বোকামি’।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘উখিয়াতে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।  জনগণ এমনিতেই নৌকায় ভোট দেবে।  স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অবাধ, সুস্থ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।  জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না’।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী।  এই বাহিনী নিয়ে বিরূপ ও অশালীন মন্তব্য অনুচিত’।
বক্তব্য সম্পর্কে চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, ‘আমার বড়ভাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর থেকে দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা একসময়ের বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।  লোকজন নানাভাবে নানান প্রশ্ন করছেন।  তাই আসন্ন নির্বাচন নিয়ে একটি উঠান বৈঠকে আমার সমর্থকদের অনুপ্রাণিত করতে দেয়া বক্তব্য কেটে-ছেঁটে, জোড়াতালি দিয়ে প্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলের অপচেষ্টা চালিয়েছে’।

ডিসি/এসআইকে/এফআরই