ছেঁড়াদ্বীপে নিষিদ্ধ হচ্ছেন পর্যটক

টেকনাফ প্রতিনিধি >>>
সেন্টমার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন সাত কিলোমিটার দূরে ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধ করছে প্রশাসন। পাশাপাশি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ১০৬টি আবাসিক হোটেল সরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষকে নতুন করে চিঠি দেবে পরিবেশ অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সোলায়মান হায়দার। তিনি জানান, সেন্টমার্টিনের সব জায়গা পর্যটকদের জন্য না। তাহলে পুরো দ্বীপ ধ্বংস হয়ে যাবে। ছেড়াদ্বীপ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব জমি। ছেড়া দ্বীপে কোরাল দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপ বাঁচিয়ে রাখতে কোরাল বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
পরিচালক সোলায়মান হায়দার বলেন, ছেড়া দ্বীপ সংরক্ষণের জন্য সেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না। কেননা লোকজনের চাপে ছেড়া দ্বীপের কোরাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পুরো সেন্টমার্টিন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে। তাছাড়া দ্বীপে গড়ে ওঠা সব আবাসিক হোটেল সরিয়ে নিতে নতুন করে নির্দশনা দেওয়া হবে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিদের্শনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব আবাসিক হোটেল-মোটেল ভেঙে দেওয়া হবে।
কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম ওয়াসিম মকসুদ বলেন, ‘দ্বীপে দিন দিন কোরাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপ বাঁচিয়ে রাখতে কোরাল বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই আমাদের দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একযোগে কাজ করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে আমাদের বিরক্ত থাকতে হবে’। ওয়াসিম মকসুদ আরও বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে স্থানীয়দের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন’। পাশাপাশি সীমান্তের মাদক ও মানবপাচার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটকের ভীড়।

কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রণমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘দ্বীপে সরকার বার বার উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। আমরা এখন কার্যকর দেখতে চাই। শুধু ছেড়াদ্বীপ কেন, পুরো সেন্টমার্টিনকে রক্ষায় অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। না বিশ্বব্যাপি পরিচিত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হারিয়ে যাবে’।
দ্বীপের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ‘প্রতিদিন দ্বীপে হাজারো পর্যটক ভ্রমণে আসছে। কিন্তু এসব পর্যটকরা ময়লা আবর্জনা ফেলছে সৈকতে। এছাড়া ছেড়া দ্বীপে পর্যটকদের চাপে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে দ্বীপ একটি শেষ হয়ে যাবে। দ্বীপ বাঁচলে পর্যটক। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি দ্বীপ রক্ষায় যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল আবদুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে থেকে ছেড়াদ্বীপে পর্যটক না যেতে একটি নিদর্শনা দিয়েছে বলে শুনেছি। এর বাহিরে আমি আর কিছু জানি না।
এদিকে ৭ এপ্রিল থেকে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিরাপত্তায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দ্বীপটিতে তাদের পাশাপাশি আবারও ভারী অস্ত্র নিয়ে টহল দিতে শুরু করেছেন বিজিবির সদস্যরা। ২২ বছর পর অস্থায়ীভাবে দ্বীপটিতে সীমান্ত চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। পরে সেখানে স্থায়ী বর্ডার আউট পোস্টও (বিওপি) তৈরি করা হবে। তবে এর আগে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সেখানে সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়োজিত ছিল। এরপর থেকে সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছেন কোস্টগার্ড, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছিল মিয়ানমার। মিয়ানমার সরকারের জনসংখ্যা বিষয়ক বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত দেশটির মানচিত্রে সেন্টমার্টিনকে তাদের ভূ-খন্ডের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। গত বছরের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত উ লুইন ওকে তলব করে এর প্রতিবাদ জানায়। এরপর মিয়ানমারের মানচিত্র সংশোধন করা হয়।

ডিসি/এসআইকে/হোআ