সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে বাড়তি সতর্কতার নির্দেশনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বসন্ত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শীতল রূপ পাল্টেছে সমুদ্র। এখন সাগর উত্তাল থাকার বিষয়টি মাথায় রেখে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলোতে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট রাখাসহ বাড়তি সতর্কতার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হঠাৎ সৃষ্ট দমকা হাওয়া ও ঢেউয়ের কবলে পড়ে পর্যটকসহ ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয় দুই জাহাজ। সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাটে ফেরার পথে এ পরিস্থিতিতে পড়ে এমভি পারিজাত ও এসটি সুকান্ত বাবু নামে পর্যটকবাহী জাহাজ দুটি।
বাতাস ও বড় ঢেউয়ের কবলে ভয়ানক দুলতে থাকে জাহাজগুলো। এতে জাহাজে থাকা অনেকেই বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জাহাজ দুটিতে শিক্ষা সফরে যাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্তত সাত শতাধিক পর্যটক ও যাত্রী ছিলেন।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে সেন্টমার্টিন জেটিঘাট থেকে জাহাজ দুটি টেকনাফের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। এর আগে মঙ্গলবার সকালে জাহাজ দুটি টেকনাফের দমদমিয়া বিআইডব্লিউটিএর জাহাজ ঘাট থেকে প্রায় ৭০০ যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন গিয়েছিল।
এমভি পারিজাতে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শাহীদুর রহমান চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে সেন্টমার্টিন জেটিঘাট থেকে জাহাজটি টেকনাফের উদ্দেশে রওয়ানা হই। ছাড়ার মিনিট ১৫ পর সাগরে উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে জাহাজটি। এসময় এটি এমনভাবে দুলছিল মনে হচ্ছিল ডুবে যাচ্ছিল। এতে সবাই ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এই জাহাজে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ প্রায় আড়াইশতাধিক পর্যটক ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাহাজটি টেকনাফের দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছায়।
এমভি পারিজাত জাহাজের টেকনাফ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. সোহেল বলেন, জাহাজটি সাগরে দমকা হওয়ার কবলে পড়েছিল, তবে নিরাপদে ঘাটে পৌঁছেছে।
এসটি সুকান্ত বাবু জাহাজের যাত্রী সোমেন শর্মা বলেন, বড় একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে উপরওয়ালা রক্ষা করেছেন। জাহাজটি ডুবে গেলে কোনো যাত্রী প্রাণে রক্ষা পেতেন বলে মনে হয় না। খুবই ভীতিকর একটি জার্নি ছিল।
এসটি সুকান্ত জাহাজের ব্যবস্থাপক বাহাদুর হোসাইন বলেন, সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসা প্রতিটি জাহাজই মঙ্গলবার বিকেলে ঢেউয়ের কবলে পড়ে। সাগরে প্রচণ্ড ঢেউ ও বাতাসের কারণে এমন হয়েছে। জাহাজে নির্ধারিত সিটের বাইরে অতিরিক্ত কোনো যাত্রী নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি একই থাকলে আমরা চেষ্টা করবো ছোট জাহাজগুলো না নামিয়ে বড় জাহাজ চলাচল করাতে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সেন্টমার্টিনের ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সেন্টমার্টিন ত্যাগ করা জাহাজ দুইটি সাগরে অকস্মাৎ দমকা হওয়ার কবলে পড়েছিল, তবে নিরাপদে ঘাটে পৌঁছেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, প্রকৃতিকে বোঝা চরম মুশকিল। হঠাৎ-ই দমকা হাওয়া শুরু হলে, ঢেউয়ের তোড় বড় হয়ে জাহাজগুলো বঙ্গোপসাগরে সমস্যায় পড়েছিল বলে জেনেছি। পরে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে নিরাপদে টেকনাফ ঘাটে পৌঁছায় জাহাজ দুটি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানান, শীত মৌসুম যেহেতু শেষ হয়েছে এখন মুহূর্তেই সাগর তার শীতল রূপ পাল্টাতে পারে। এজন্য বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিন রুটে চলমান জাহাজগুলোতে লাইফ জ্যাকেটসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বিদ্যমান রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সাগর উত্তালের খবর পাওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হয়। প্রতিদিনের সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করতে মাঠে আমাদের একটি টিম রাখা হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ