ওবায়দুল কাদের আপনারা রাজাকারের পরিবার, আ’লীগের অনেক ক্ষতি করছেন : এমপি একরামুল

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের অনেক ক্ষতি করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ‘আপনি (ওবায়দুল কাদের) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি করে যাচ্ছেন।  যে ক্ষতি আওয়ামী লীগের পুষিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হবে।  আপনি কেন বোঝেন না, নেত্রী (শেখ হাসিনা) বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনাকে চুপ থাকার জন্য বলছেন।  আপনার এই অ্যাক্টিভিটিজ (কর্মকাণ্ড) কেউ পছন্দ করছেন না।  নোয়াখালীর মানুষ তো না।  নোয়াখালীর কয়েকজন সুবিধাবাদী লোক ছাড়া বেশিরভাগের কাছে আপনি ঘৃণিত লোক’।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯ টায় সিঙ্গাপুরে বসে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন।  তবে কিছুক্ষণ পর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভ ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়া হয়।  এর আগে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
১৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই লাইভের শুরুতেই একরামুল করিম বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম প্রিয় নোয়াখালীবাসী।  আমাকে চিনতে পেরেছেন কিনা জানি না।  আমার নাম একরাম চৌধুরী।  তিনবারের এমপি।  সদর-সুবর্ণচরের আপনাদের আদরের চৌধুরী।  আমার হার্টে পাঁচবার রিং বসিয়েছি।  অনেক চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে ভালোবাসা দিতে।  ভালোবাসা পেয়েছিও।  এরমধ্যে কিছু ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে।  আমার স্ত্রী ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে বলেছে, তোমার চেহারা দেখার চেয়ে তোমার লাশ দেখাই ভালো।  এতে আমি খুবই ব্যথিত হয়েছি’।
তিনি বলেন, ‘নোয়াখালী বিএনপির ঘাঁটি ছিল। দীর্ঘ ২০ বছর পরিশ্রম করে এটাকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানিয়েছি।  কাদের ভাই তার ভাইকে লেলিয়ে দিয়েছেন, আমার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য।  ওবায়দুল কাদের আমাকে এক টাকার বেনিফিটও দেয়নি।  বরং আমি ওনার কাছে যে কাজটা চেয়েছি, সেই কাজগুলো আমি যেন না পাই সে ব্যবস্থা করেছেন।  তবে ওনাকেও জবাবদিহি করতে হবে।  জবাব তো অলরেডি দিচ্ছেন ওনার ভাইয়ের (মির্জা কাদের) কাছে।  ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনাকে আমি ঘৃণা জানাই।  আপনি বিচার করতে জানেন না’।
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে বাংলাদেশ সম্বন্ধে।  আমরা কোন দেশে আছি।  যেভাবে এসপি, ওসি, ইউএনওকে বলা হয় কুলাঙ্গার।  ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি কন্ট্রোল করতে না পারলে একটা দিন আমাকে দেন।  আপনার ভাইকে ওই পিচঢালা রাস্তার ওপর দিয়ে চেঁচায়ে চেঁচায়ে আনবো।  আপনার কারণে আমাদের অনেকের মুখ বন্ধ।  আমার মুখ বন্ধ।  বিশেষ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা ৪-৫ বার খবর পাঠিয়েছেন নানক ভাইয়ের মাধ্যমে।  আমি যেন কোনো কথা না বলি।  আজকে কথাগুলো বলতেছি, যেহেতু হার্ট অপারেশন, বাঁচতেও পারি, মরেও যেতে পারি’।
কাদের মির্জার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি বুকে হাত রেখে বলেন তো গত ১০-১৫ বছরে কত টাকা আমার কাছ থেকে নিয়েছেন?  কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন।  আর এখন সাধু বাবা সেজেছেন।  এখন আপনি যেগুলো করে যাচ্ছেন, কোম্পানীগঞ্জের মানুষ আজীবন আপনাকে ঘৃণা করবে।  আপনি কথায় কথায় বলেন, আমার ছেলের হাতে অস্ত্র।  আমি ২৬টি খুন করেছি।  একটি খুনের কথা বলেন তো কোথায় আমি খুন করেছি।  আপনাদের পরিবার কী আপনি নিজেই বলেন, আপনার ভাগনেও বলেন, আপনারা রাজাকারের পরিবার’।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহীনের উদ্দেশে একরামুল করিম বলেন, ‘তুমি এমপি হতে চাও?  এমপি হওয়া এত সোজা জিনিস না’।
জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একটা জালিমের থেকেও খারাপ।  ৪০ বছর সে চরবাটাকে শাসন করেছে।  কিন্তু কী দুঃশাসন করেছে সেটা আমি এমপি হওয়ার পর জেনেছি।  তিনি দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে ও ওবায়দুল কাদের ভাইকে ভুল বুঝিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হয়েছেন।  কিন্তু সেটা বন্ধ করা আমার জন্য মিনিটের বিষয় ছিল মাত্র।  কিন্তু আমি তা করিনি।  ওবায়দুল কাদের সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার সুবিধার জন্য’।
আওয়ামী লীগের এই এমপি দাবি করেন, ‘কাদের সাহেবের বিরুদ্ধে আমি ২০০১ সালে ভোট করেছিলাম।  ওই অবস্থান থেকে ২০০৮ সালে আমাকে দলে নেওয়া হলো। ২ ০০৮ সালে এসে নোয়াখালী-৪ আসন থেকে ভোট করার ব্যবস্থা করে দেন কাদের ভাই।  উনি মনে করেছেন ওটা তো বিএনপির ঘাঁটি, একরাম জিতবে না।  তখন অনেক বড় বড় নেতা আমাকে ইঙ্গিত আকারে বলেছে, তাকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য।  অনেক কষ্টে কাদের ভাই ১১০০ ভোট নিয়ে জিতলেন।  তাও আমার ইউনিয়নের ভোট নিয়ে’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ