পাঁচদশক ধরে পানির জন্য হাহাকার কাপ্তাইয়ের নোয়াপাড়ায়

মাহফুজ আলম, কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি >>>
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডস্থ নোয়াপাড়া মারমা পাড়া অধ্যুষিত গ্রামবাসীর ভাগ্যে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জুটেনি একটি ডিপটিউবওয়েল।  এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে হাহাকার চলে বছরের পর বছর।  খাবার পানি, ধোয়া-মোছা এবং গোসলের পানির জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় প্রাকৃতিক উৎস পাহাড়ি ঝর্ণা, ছড়া ও বিকল্প গর্তে জমে থাকা পানির ওপর।
শুষ্ক মৌসুম অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত অধিকাংশ ঝর্ণার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পানি সংগ্রহ করতে হয় পাহাড়ি ছড়ার ময়লাযুক্ত ঘোলা পানি কিংবা টিলার নিচে তৈরি অগভীর গর্ত থেকে।  অগভীর কুয়ায় চুইয়ে চুইয়ে আসা পানি বাটিতে করে তুলে ছেঁকে কলসি ভরাতে গিয়ে এখানকার মানুষদের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়।  এভাবেই নিত্যদিনের পানি সংগ্রহে রীতিমতো সংগ্রাম চলে নোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের।
বিশুদ্ধ পানির সংকট থাকায় দুর্ভোগের শিকার নোয়াপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আইয়েমা মারমা ও অধিকাংশ যুবক-যুবতী প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মিনিট পাহাড়ি পথ হেঁটে পানি আনতে যেতে হচ্ছে মৃত ছড়াটির সম্মুখে খোঁড়া ছোট একটি গর্তের কাছে।  গর্ত থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি বের হয়।  সেই পানি বাটিতে তুলে একটু একটু করে কলসি ভরে নিজ নিজ বাড়িতে পানি বহন করে নিতে হয়।  এক কলসি পানি নিয়ে প্রশান্তির হাঁসি দিয়ে ভুক্তভোগীরা মারমা ভাষায় বলেন, ‘রি মা আমিয়াগ্রি দুঃখ্যা (বেশি কষ্ট, পানির কষ্ট)’।
শীতকাল থেকে পাহাড়ে শুরু হয় পানির কষ্ট। খাবারের পানি, ধোয়ামোছাসহ নিত্য দিনের কাজের পানির আকাল থাকে বর্ষার আগ পর্যন্ত। অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে মে- এ ছয় মাস।  এই কষ্ট দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ভোগ করছেন সেখানকার অধিবাসীরা।
দুর্ভোগের শিকার নোয়াপাড়া এলাকার কারবারি সাজাই মারমা, সুুুশীল সমাজের প্রতিনিধি অংথোয়াই মারমা ও এলাকাবাসি জানান, নিজেদের উদ্যোগে টাকা খরচ করে রিং টিউবওয়েল এবং কুয়া স্থাপন করলেও পানিতে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ থাকার কারণে ব্যবহার অনুপযুগী।  এগুলো যা স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতি।  নালা নর্দমা থেকে নেমে আসা ও ছড়ার ময়লাযুক্ত পানিই কাপড় দিয়ে ছেঁকে পান করতে হয়।  কিন্তু এখন সেই সুযোগও পান না সেই ছড়ার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়।
এ ব্যাপারে ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চিরঞ্জিদ তনচংগ্যা দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, আগামিতে নোয়াপাড়া এলাকায় পানির কল দেওয়ার চিন্তাধারা চলছে।
কাপ্তাই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিমন চন্দ্র বর্মন রবিবার (২ মে) দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, বিষয়গুলো স্হানীয় জনপ্রতিনিধিরা না বললে আমরা কিভাবে জানবো?  তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে যেভাবে বলেন সে অনুপাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কাজ করে থাকে।
এলাকাবাসী একটি গভীর নলকূপ স্থাপনে করে বিশুদ্ধ পানির সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএ