আনোয়ারায় পরীক্ষামূলক সূর্যমূখী ফুলের চাষ : সফলতার হাতছানি

জাহাঙ্গীর আলম, আনোয়ারা প্রতিনিধি >>>
আনোয়ারায় প্রথম বারের মতো কৃষি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছে কৃষকরা। এতে বোরো চাষের চেয়ে অধিক লাভের আশা দেখছে তারা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে শোলকাটা, বরুমচড়া, বৈরাগ ও ওষখাইন এলাকায় কৃষি জমিতে বোরো চাষের পরিবর্তে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেন কৃষকেরা। হৃদরোগ প্রতিরোধী তেল, মধু উৎপাদন, সবজির চাহিদা ও দেহের পুষ্টি পূরণে সম্ভাবনাময়ী এই ফুলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকেরা এই ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। দেশের সয়াবিন ও সরিষার তেলের ঘাটতি পূরণে সূযমুখী চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা কৃষিজীবীদের।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল, মধু, সবজি ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তেল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি শতক জমিতে ৮ কেজি বীজ উৎপাদন হয়। এতে তেল উৎপাদন হবে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি শতক জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। এ বছর উপজেলায় শোলকাটা, বরুমচড়া, বৈরাগ ও ওষখাইন এলাকায় ৮০ শতক জমিতে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা।
কৃষকরা জানান, বোরো চাষ খুব একটা লাভজনক নয়। বোরো চাষ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেই টাকার ধান পাওয়া যায় না। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা করছেন তারা।
শোলকাটা গ্রামের কৃষক মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমার ২০ শতক জমি আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। এই ২০ শতক জমিতে বীজ উৎপন্ন হবে ৪ মণ। এই ৪ মণ বীজ থেকে তেল হবে প্রায় ১৪০ লিটার। এতে তেল বিক্রি করতে পারব ৩৫ হাজার টাকা’। তিনি আরো বলেন, ‘আগামিতে আমি আরো ১’শ থেকে ১৫০ শতক জমিতে এ ফুল চাষ করব বলে আশা করছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষক সূর্যমূখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন’।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ছরোয়ার আলম দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, ‘সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল’।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, এ বছর প্রথম আনোয়ারায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। এই ফসল থেকে হৃদরোগ প্রতিরোধী তেল উৎপাদন ছাড়াও মধু, খাদ্য শশ্য ও জ্বালানী পাওয়া যায়। ‘উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে ধান চাষ খুব একটা লাভজনক নয়। কিন্তু লবণাক্ত জমিতেও সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়। যার ফলে আমরা কৃষকদেরকে লাভজনক ফসল সূর্যমুখীর আবাদ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এবার ৮০ শতক জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী চাষে সেচের দরকার হয় না। আমরা সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষকদের সার ও বীজ প্রণোদনা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আগামি বছর সূর্যমুখীতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিক মধু উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/জেএ