বাঁশখালী ছনুয়ায় বেড়িবাঁধ স্থানীয়দের আতঙ্ক!

মু. মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী প্রতিনিধি >>>
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলের স্বপ্নের বেড়িবাঁধ তৈরির জন্য বার বার সময় ক্ষেপণের ফলে যে আশা নিয়ে কাজটি শুরু হয়েছে তা অনেকটা ম্লান হতে বসেছে।  বার বার নানা অজুহাতে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি করা হলেও তা নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার।  অপরদিকে গত ৩১ জানুয়ারি উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ছনুয়া অংশ পরিদর্শনে গিয়ে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে বলে মিডিয়াকর্মীদের জানিয়েছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক।
একদিকে বিশ্ব মহামারি করোনার ভয়াল প্রাদুর্ভাব, অপরদিকে সাগর উত্তাল হওয়ায় আবারও ভাঙতে শুরু করেছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ছনুয়া খুদুকখালী ও খানখানাবাদের বিভিন্ন পয়েন্টে।  ফলে বাঁধের কাজ শেষ না হতেই ভাঙতে শুরু হওয়ায় সেখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা ও চাপা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।  বাঁশখালীর জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ কাজে পাউবো ২০১৩ সালে বাঁধের নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে ২০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়।  পরে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়া ও ঠিকাদারদের আপত্তির মুখে ২০১৫ সালে বাঁধ নির্মাণে ২৫১ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার অনুমোদন দেয় সরকার।  একদিকে পাউবো কর্মকর্তাদের শহরে বসে তদারকি; অন্যদিকে রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের সাব-ঠিকাদারি নিয়ে কাজে অনিয়মের ফলে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার আগেই আবারও ভাঙনের কবলে পড়ায় হতাশায় ভুগছেন উপকূলীয় জনগণ।  তাদের প্রশ্ন সরকারের এ বিশাল প্রকল্প কখন আলোর মুখ দেখবে এবং শেষ হবে তা নিয়ে দূশ্চিন্তায় তারা।
২০১৫ সালের ১ মে থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ধরা হলেও তা দুই মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করা হয়।  এরপরও কি এক অজানা কারণে কাজ আর এগোয় না।  ফলে বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের তোড়ে ভাঙছে ছনুয়ার খুদুকখালীসহ বিভিন্ন পয়েন্ট আর খানখানাবাদের কদমরসুল হাছিয়াপাড়া প্রেমাশিয়া এলাকা।  বাঁশখালী উপজেলার ৬৪/১এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি নম্বর পোল্ডারসমূহের সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর প্রকল্পে ঢালু সংরক্ষণসহ বাঁধ নির্মাণ ৯.৯০০ কিলোমিটার, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ৩.৮৪৮ কিলোমিটার, বাঁধ পূণরাকৃতিকরণ ২ কিলোমিটার। ৩৪ প্যাকেজে কাজ শুরু করে ঠিকাদার।  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মেসার্স হাছান অ্যান্ড ব্রাদার্স ২০টি প্যাকেজ, মেসার্স মশিউর রহমান আটটি প্যাকেজ, মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজ দুটি প্যাকেজ, মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড সন্স দু’টি প্যাকেজ, নিয়াজ ট্রেডার্স একটি প্যাকেজ, আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স একটি প্যাকেজের কার্যাদেশ পেয়েছে।  এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে খানখানাবাদে ৪ হাজার ৫০০ মিটার, ছনুয়ায় ৩ হাজার ২০০ মিটার, সাধনপুরে ২ হাজার ৭৯ মিটার, পুকুরিয়ায় ১ হাজার ২৬৯ মিটার, গন্ডামারায় ৯০০ মিটার কাজ শুরু হয়।  প্রকল্পের আওতায় ঢালু সংরক্ষণসহ বাঁধ নির্মাণ এবং নদী তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, সমুদ্রের লোনা পানির প্রবেশ রোধ এবং নদী ভাঙন রোধ করতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।
ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশিদ দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, বর্তমানে জোয়ারের তোড়ে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে।  খুদুকখালী, ডগ এলাকা, সেলবন, মধুখালী, আবাখালিসহ বিভিন্ন পয়েন্টে উপড়ে পানি প্রবেশ করছে।  তা যদি রোধ করা না যায় তাহলে বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি প্রবেশ করলে সাধারণ জনগণকে বাঁচানো যাবে না।
পাউবোর উপ-প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, বাঁশখালীর উপকূলীয বাঁধের কোনো সমস্যা নেই, তবে প্রেমাশিয়া এলাকায় সামান্য সমস্যা হয়েছে তাতে চেয়ারম্যানসহ জিও ব্যাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  এতদিন বাহারছড়া পয়েন্টে, প্রেমাশিয়া ও ছনুয়ায় কাজ চলমান ছিল।  করোনা ভাইরাসে লকডাউনের ফলে শ্রমিকেরা  নিজ নিজ বাড়ি ঘরে চলে গেছে।  ঈদের পর আবার কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।

ডিসি/এসআইকে/এমএমবিটি