মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়াই দাফন : ফুঁসছে বাঁশখালীর মানুষ, মাঠে তদন্ত টিম

বাঁশখালী প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থান করে নেয়া মৌলভী ছৈয়দের বড় ভাই আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মানুষ।  প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছে মানববন্ধন।  মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও সন্তান কমান্ড আয়োজিত একই কর্মসূচি থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে গণমাধ্যমে দেয়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের বক্তব্যেরও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) দুপুরে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ গেটে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে এ দু’টি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বক্তারা।  উপজেলা পরিষদ গেটে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও সন্তান কমান্ড আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিপুল জনসমাগম- বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান না জানানোর ক্ষোভকে যেন আরো উস্কে দিয়েছে।  উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহবায়ক ফয়সল জামিল চৌধুরী সাকির পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (অর্থ) আব্দুর রাজ্জাক।
এছাড়াও মঙ্গলবার বিকালে মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফকে গার্ড অব অনার না দেয়ার ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বদিউল আলম শেখেরখীল লালজীবন গ্রামে যান।  তিনি সেখানে গিয়ে মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন।  মৃত মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলীর ছেলে জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর তদন্ত কমিটির কাছে পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।
এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্যকালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা কঠিন সময় পার করছি।  মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলেও মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুর পরেও সম্মান না পাওয়াটা দুঃখজনক।  আজকে এমন সময় পার করছি আওয়ামী লীগদলীয় এমপি বাঁশখালীতে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি বলে মন্তব্য করে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করেছেন।  আমরা মনে করি দু’টি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা।  মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেয়া আসলেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাকি প্রশাসনের গাফেলতি ছিল পরিষ্কার করতে হবে।  নয়তো দুর্বার আন্দোলনে মাঠে নামবে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা।
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হাশেম বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার না দেয়া এ সময়ের জন্য বেদনাদায়ক।  আমরা যথাসময়ে প্রশাসনকে জানালেও কেন এমন আচরণ করা হলো জানি না।  আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফের বড়ছেলে জয়নাল আবেদীন আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমাদের পরিবারে সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মৌলভী ছৈয়দ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন।  আজ উনার বড়ভাই আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না পাওয়াটা দুঃখজনক।  আমার বাবার নাম সরকারের সব গেজেটে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বাঁশখালীর সংসদ সদস্য আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা নয় বলে মন্তব্য করেছেন।  এমনকি বাঁশখালীতে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি- এমন মন্তব্য করার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।  উনি ইতিহাস বিকৃতি করেছেন।  আমরা এমন ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।  একই সাথে আমার বাবাকে গার্ড অব অনার না দেয়ার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আজিমুল ইসলাম ভেদু, আজিজ উদ্দিন হায়দার, সরোয়ার হোসাইন চৌধুরী, আহমদ ছফা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নজরুল ইসলাম, আব্দুল ওয়াজেদ, মৃদুল দত্ত, জসীম উদ্দিন, ওয়াহিদুল ইসলাম, সাজেদুল ইসলাম, মো. মান্নান, মো. আক্তার প্রমুখ।

ডিসি/এসআইকে/এমএমবিটি