মু. মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী প্রতিনিধি >>>
লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলাবাসী। তীব্র গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষুব্ধ এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠী। পল্লী বিদ্যুতের এমন ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ঈদুল আজহার দু’দিন আগে থেকেই লোডশেডিং বেড়েছে। তীব্র গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। লোডশেডিংয়ের কারণে অফিস-আদালতেও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। দিনে ৮-১০ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। দিনে ৫-৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না বলে দাবি সাধারণ মানুষের। উপজেলার প্রায় ৯৫ হাজার ৭৯৪ জন গ্রাহক বিদ্যুতের এসব অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর সাথে যদি কালবৈশাখীর একটু বাতাস হয় তবে বিদ্যুৎ অফিসে কারো সাথে আর দেখা মিলে না। অঘোষিত গাছ কাটার নামে, জড়ো-হাওয়ার অজুহাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত বিদ্যুৎ আর আসে না।
সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি। এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আসতে না আসতেই বন্ধ হয়ে যায় অন্য এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতো ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে লাইট, টিভি, ফ্রিজ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রিক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কম্পিউটার, ফ্রিজ, পানির পাম্প, ফটোকপি মেশিনসহ বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
চলতি ইলিশের ভরা মৌসুমে বরফ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এলাকার কল-কারখানাগুলোতে। দিনে-রাতে মিলে অন্তত ১৫-২০ বার বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে। কখনো কখনো বিদ্যুৎ চলে গেলে কয়েক ঘণ্টা পর আসে। গ্রাহকদের অভিযোগ, এ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুৎ এর আওতাধীন ঘোষণা করা হলেও সেবার মান বাড়েনি। এই মুহূর্তে উপজেলাবাসীর প্রধান সমস্যা লোডশেডিং। প্রায় সময় ৩৩ কেভি লাইনের সমস্যা, গাছের ডালপালা কাটা থেকে শুরু করে ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই বন্ধ থাকছে বিদ্যুৎ। বছরের সারা মাসে বিদ্যুৎতের ভেল্কিবাজিতে এমনিতেই অতীষ্ঠ থাকেন বাঁশখালীবাসী। দিনের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না; এমনকি রাতেও বিদ্যুতের লুকোচুরি চলে দীর্ঘ সময়জুড়ে। প্রচন্ড গরমের সঙ্গে বাঁশখালী জুড়ে চলছে নতুন নিয়মে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। সাধারণ গ্রাহকরা এ জন্য উৎপাদনের তুলনায় বেশি সংযোগ ও কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন।
গুনাগারি এলাকার রিকশা চালক মো. রফিক বলেন, ‘সারাদিন রিকশা চালিয়ে বাড়িতে ফিরে দেখি বিদ্যুৎ থাকে না। এতো গরম বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারি না’।
জলদী পৌর সদর এলাকার স্কুলছাত্রী আসমাউল হুসনা লাকি বলেন, ‘সারাদিনে ১০-১২ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। ঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারছি না। যখনি পড়তে বসি বিদ্যুৎ চলে যায়’।
চাম্বল এলাকার বাসিন্দা অ্যাড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘রাত-দিন সব সময় লোডশেডিং চলছে। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার মনে হয় বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারনেই এমনটা হচ্ছে। এটার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া দরকার’।
কালীপুর এলাকার সোলতানা বাজেকা বলেন, ‘বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ তো যায় না; মাঝে-মাঝে আসে। গরম পড়ার পর থেকে দিন-রাত সব সময় বিদ্যুৎ থাকে না’। এটাই বাঁশখালীর মানুষের বড় সমস্যা বলে আমি মনে করি। এটার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া অতিব জরুরি হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন এ উপজেলায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলে প্রায় ৯৫ হাজার ৭৯৪ জন গ্রাহক আছে। যার জন্য প্রতিদিন পিক ও অফ পিক আওয়ার মিলে ২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে।
তবে পল্লীবিদ্যুতের স্থানীয় জোনাল অফিসের দাবি- তাদের এলাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বাঁঁশখালী জোনাল অফিসের অতিরিক্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. মফিজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। ঝড়-বৃষ্টির কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। বিভিন্ন সময় লাইনে কাজ করতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। তাছাড়া ৩৩ কেভি থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলে তা তাদের বিষয় না। এটি চন্দনাইশ গ্রিডের সমস্যা। কারণ দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে দীর্ঘ ৪৬ কিলোমিটার অতিক্রম করে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ আসে। তবে গুণাগরি থেকে সাতকানিয়া হয়ে রাস্তা পাহাড়ি এবং অতিরিক্ত খারাপ হওয়ায় বিভিন্ন সময় জনবল সংকট হওয়ার কারণে অনেক সময় ত্রুটির সৃষ্টি হয়। এ গ্রিডে ২৮ মেগাওয়াট লোড নিতে পারে। বিগত কয়েকদিন যাবৎ ২৮ মেগাওয়াট লোড পার হয়ে অতিরিক্ত হওয়ায় লোডশেডিং হয়েছিল। গত শুক্রবার (৭ আগস্ট) রাত থেকে কোনো লোডশেডিং নেই বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়াও কর্ণফুলী থানাধীন শাহমীরপুর থেকে তৈলারদ্বীপ ব্রীজ সংলগ্ন সাঙ্গু নদী ক্রস করে আরেকটি ৩৩ হাজার কেভির নতুন লাইন বাঁশখালীতে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, ডিজাইনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়াও কক্সবাজার থেকে চকরিয়া-পেকুয়া হয়ে বাঁশখালীতে আরো একটি বিদ্যুৎ লাইন আসছে। এই ২টা নতুন লাইন যদি বাঁশখালীতে ঢুকে; তাহলে খুব শীঘ্রই বাঁশখালীবাসী বিদ্যুতের লোডশেডিং থেকে মুক্ত থাকবেন বলে তিনি জানান।
ডিসি/এসআইকে/এমএমবিটি