বাঁশখালীতে জোয়ারের পানিতে ভাঙছে বেড়িবাঁধ

মু. মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী প্রতিনিধি >>>
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফেলতির কারণে সংস্কার হচ্ছে না দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী বাঁশখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী পুঁইছড়ি ইউনিয়নের আরবশাহ্ ঘোনা স্লুইসগেইটটি।  ছনুয়া খাল সংলগ্ন পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম পুঁইছড়ির সাথে পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলার আরবশাহ বাজারের সংযোগ স্লুইসগেইট এখন প্রায় বিকল।  ১৯৮২ সালে নির্মিত আরবশাহ্ ঘোনা নাশি (স্লুইসগেইট) অকেজোঁ হয়ে পড়ায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে।  স্লুইসগেইট সংযোগ বেড়িবাঁধটিও ভেঙে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।  এ নিয়ে দক্ষিণ ও পশ্চিম পুঁইছড়ির প্রায় হাজারো বসতঘর বিলীন হওয়ার শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সেখানকার অসংখ্য মানুষ।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাঁশখালী-পেকুয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পুঁইছড়ি-টৈটং ইউনিয়ন সংযোগ ছড়ায় পানি চলাচলের জন্য যে কালভার্ট (নাশি) আছে তা কয়েক বছর ধরে সংস্কারবিহীন পড়ে থাকায় স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল করতে পারছে না।  ফলে বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের পানিতে দক্ষিণ পুঁইছড়ির ডাকাতিয়া ঘোনা, পন্ডিতকাটা ও সিকদার পাড়ার লোকজন পানিবন্দী থাকেন।  এতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে নেমে আসে স্থবিরতা।  ক্ষেতের ফসলি জমি তলিয়ে যায় পানিতে।  আরবশাহ্ ঘোনা স্লুইসগেইট দ্রুত সংস্কার করা না হলে সামনের বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যাবে পূঁইছড়ির পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চল- এমনটাই আশঙ্কা তাদের।
গত বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আরবশাহ ঘোনা স্লুইসগেইট প্রায়ই অকেজোঁ হয়ে পড়েছে।  স্লুইসগেইটের উভয় পাশের বাঁধটি ভাঙতে ভাঙতে প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।  জোয়ারের স্রোতে যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার আশঙ্কা রয়েছে।  স্লুইসগেইট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ মেরামত করা না হলে পশ্চিম পুঁইছড়ির সাথে পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলার আরবশাহ্ বাজারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।  জোয়ারের পানিতে পুঁইছড়ির নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাবে।  এতে মাছের ঘোনা, চাষের ফসলি জমিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় মু. ইউনুছ, আবু তাহের, বাবুল চৌধুরীর সাথে কথা বলে জানা যায়, স্লুইসগেইট না থাকার কারণে গেল বর্ষা মৌসুমে সপ্তাহ জুড়ে টানা বৃষ্টির ফলে পেকুয়া-বাঁশখালীর সীমান্তবর্তী পুঁইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ পুঁইছড়ির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডাকাতিয়া ঘোনা, পন্ডিতকাটা ও সিকদার পাড়ার প্রায় ২ হাজারের অধিক জনসংখ্যার ৫ শতাধিক বসতঘর পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল।
পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মু. কামাল উদ্দীন দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, ‘সীমান্তবর্তী সংযোগ কালভার্ট হওয়ার কারণে কেউ কালভার্টের সঠিক সংস্কারের এগিয়ে আসছে না।  ফলে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে আর পাহাড়ি ঢলে পানি নিষ্কাষণ বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে।  ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়।  এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় উপজেলার দক্ষিণ পুঁইছড়ির জনসাধারণকে।  এ নিয়ে বেশ কয়েকবার পাউবো কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও তাদের গাফেলতির কারণে স্লুইসগেইটটি সংস্কার হচ্ছে না, আশার আলো দেখছেন না স্থানীয়রা’।
পুঁইছড়ি এলাকার রোটারিয়ান মুবিনুল হক মুবিন দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি সরেজমিনে যাই।  স্লুইসগেইট সংলগ্ন বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে।  যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।  আমি নিজের অর্থায়নে বাঁধ নির্মাণে সহায়তা করি।  গত সোমবার শ্রমিক দিয়ে বড় কোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে মাটিভরাটের ব্যবস্থা করি’।  তিনি আরো বলেন, ‘আমি অস্থায়ীভাবে সাপোর্ট দিয়েছি মাত্র।  স্লুইসগেইটের বাঁধ সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার পাউবোকে অবহিত করলে তারা দ্রুত সংস্কার করবে বলে আশ্বস্থ করেন’।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, ‘বাঁশখালীর উপকূলীয় পুঁইছড়ি আরবশাহ্ ঘোনা স্লুইসগেইট অকেজোঁ হয়ে পড়া এবং সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার বিষয়ে আমরা অবগত।  তাৎক্ষণিক কোনো বরাদ্দ না থাকায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।  স্লুইসগেইট নির্মাণ ও বাঁধ সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে’।  খুব শীঘ্রই সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।

ডিসি/এসআইকে/এমএমবিটি