চন্দনাইশ-দোহাজারী পৌরসভা : আড়াই বছরেও নিয়োগ নেই ৭১ পদে

চন্দনাইশ প্রতিনিধি
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দোহাজারী ইউনিয়নকে ২০১৭ সালে পৌরসভায় রূপান্তর করা হলেও জনবল সংকটের কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। অনুমোদন করা হয়নি সহায়ক কমিটি। ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট দোহাজারী ইউনিয়নকে পৌরসভায় রূপান্তরিত করার পর দীর্ঘ আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও পৌর প্রশাসক দিয়ে চলছে পৌরসভার কাজ। এখনো অনুমোদন করা হয়নি সহায়ক কমিটি’রও। এছাড়াও ওয়ার্ড বিভাজনের কাজও সম্পন্ন করা হয়নি। ফলে দোহাজারী পৌরসভায় কবে নাগাদ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পৌরসভা আইন অনুযায়ী ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়াও সচিব, একাউন্টেন্ট, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৭৪টি পদ রয়েছে। কিন্তু দোহাজারী পৌরসভা ঘোষণার আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও লাইসেন্স পরিদর্শকসহ ৭১টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। পৌরসভা হওয়ার পর স্থানীয় বিভিন্ন ধরনের করের পরিমাণ বাড়লেও সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ পৌরবাসীর।
জানা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট দোহাজারীকে পৌরসভা ঘোষণা করে সরকারি গেজেট জারি করা হয়। দীর্ঘ আড়াই বছর পূর্বে পৌরসভা ঘোষণা করা হলেও জনবল সংকটের কারণে সেবা পাচ্ছে না পৌরবাসী। দোহাজারী পৌরসভায় নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় কাদা পানিতে একাকার হয়ে পড়ে সড়কপদ। সড়কবাতি, ডাস্টবিন, হাটবাজার, পৌরসভার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোরও বেহাল দশা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও জাতীয় সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদপত্র পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। পৌরসভার রেলওয়ে স্টেশনের একমাত্র শৌচাগারটি এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে পৌরকর আদায় করলেও নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই পাচ্ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এমনকি পৌরসভার কোথাও সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়নি। সরকারিভাবে আসা বরাদ্দ সহায়ক কমিটি না থাকায় যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না বলেও পৌরবাসীর অভিযোগ।
দোহাজারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বেগ বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সহায়ক কমিটি অনুমোদন না হওয়ায় পৌরসভার উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণ জনগণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দোহাজারী পৌরসভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান আলী ভুট্টো বলেছেন, একজন প্রশাসক, একজন সহকারী প্রকৌশলী, একজন লাইসেন্স পরিদর্শক দিয়ে চালানো হচ্ছে পৌরসভার কার্যক্রম। লক্ষাধিক মানুষের ঐতিহ্যবাহী দোহাজারীর উন্নয়ন বাধাগ্রহমশ হচ্ছে এসব কারণে। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সহায়ক কমিটি অনুমোদন না হওয়ায় উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সে সাথে নির্বাচন তরান্বিত হচ্ছে না। সরকারি প্রাপ্ত বরাদ্দ সম্পর্কে কোনোরকম জবাবদিহিতা না থাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়নমূলক কাজগুলো যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে দোহাজারী পৌর প্রশাসক ও চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম বদরুদ্দোজা বলেন, পূর্বের পরিষদ তাদের হিসাব-নিকাশ যথাযথভাবে অফিসিয়ালি বুঝিয়ে দেয়নি। সে কারণে বিধি মোতাবেক সহায়ক কমিটি’র অনুমোদনের জন্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অন্যান্য সময়ের তুলনায় আরো বেশি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪ কোটি টাকার কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। তাছাড়া রাজস্ব আদায়ও অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ডিসি/এসআইকে/সাপ্র