উপজেলা চেয়ারম্যান-ইউএনও’র সাথে ফটিকছড়ি গাউছিয়া কমিটির মতবিনিময়

ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে মতবিনিময়কালে গাউছিয়া কমিটির নেতৃবৃন্দ।

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি প্রতিনিধি >>>
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের দাফন-কাফন ও বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম নিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ সায়েদুল আরেফিনের সাথে পৃথক মতবিনিময় করেছেন গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ ফটিকছড়ি উপজেলা উত্তর শাখার নেতৃবৃন্দ।  মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সকালে উপজেলা পরিষদে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ ফটিকছড়ি উত্তর শাখার সভাপতি আল্লামা মুহাম্মদ আবু তাহের আলকাদেরী, সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান সমন্বয়ক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাছউদ কাদেরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মুহাম্মদ ওসমান খাঁ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আলি ফারুকি, অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ ফয়েজুল আলম আলকাদেরি, দাওয়াতে খায়র সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন মামুন, প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ জোনাইদ হোসাইন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা ইউছুপ মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন শাহ, মাওলানা মুহাম্মদ শফিউল আলম ইমন।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের দাফন-কাফনের সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ।  বাংলাদেশে যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছিল তখন মৃত ব্যক্তির লাশের আশেপাশেও আসেনি কেউ, লাশ দাফনেও দেয়া হচ্ছিলো নানান বাধা।  এসব দেখে আমাদের গাউছিয়া কমিটি সিন্ধান্ত নেয় করোনায় মৃতদের দাফন-কাফন করার।  প্রথম পর্যায়ে আমরা শুধুমাত্র চট্টগ্রামে আমাদের সেবা কার্যক্রম চালালেও পরবর্তীতে পুরো বাংলাদেশেই আমাদের সেবাগুলা চালু করা হয়।  এবং ভবিষ্যতেও আমাদের সেবা চালু থাকবে।  দিন বা রাত যেকোনো সময় আমরা আমাদের টিম নিয়ে প্রস্তুত আছি যে কোনো প্রতিকূল অবস্থায়ও আমাদের সেবা দিতে।  শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের নয় বাংলাদেশে অবস্থানরত সব ধর্মালম্বীদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত।

ফটিকছড়ির ইউএনও’র সাথে মতবিনিময়কালে গাউছিয়া কমিটির নেতৃবৃন্দ।

উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের প্রথম থেকেই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।  অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশ অনেক ভালো ছিল।  তারপরও অনেকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।  আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।  আক্রান্ত রোগীদের লাশ নিয়ে পোহাতে হয়েছিল নানা ঝামেলা।  নিজের আত্মীয়-স্বজন আসেনি লাশ দাফন-কাফন করতে।  এগিয়ে আসে গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ।  তাদের এ কার্যক্রম জাতি আজীবন মনে রাখবে।  যারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সায়েদুল আরেফিন বলেন, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ ফটিকছড়ি শাখার কিছু কাজে আমি নিজেই সহযোগিতা করেছি।  তারা ঝুঁকি নিয়ে, পরিবারের মায়া ত্যাগ করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিরদের লাশ দাফন কাফন, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে।  আমি আশা রাখব ভবিষ্যতেও দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে তারা এগিয়ে আসবে মানবসেবায়।  উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস প্রকোপের প্রথম থেকেই দরিদ্রদের ত্রাণ সামগ্রী প্রদান, টেলি মেডিসিন সেবা, বিনামূল্যে অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং বাংলাদেশে প্রথম তারাই উদ্যোগ গ্রহণ করে করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন-কাফনের।  তারা প্রথম ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়ায় করোনা আক্রান্ত একজনকে দাফন করেন।  ১৭ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৬৫৪ কোভিড-নন কোভিড ও সারাদেশে মোট ৮৬৫টি লাশ দাফনা-কাফন করেছে গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ।  প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কর্মী কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।  ফটিকছড়িতে এখন পর্যন্ত ১২ জনের লাশ দাফন-কাফন করেছে গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ।

ডিসি/এসআইকে/এমজেইউ