বিক্ষোভে উত্তাল হাটহাজারী মাদরাসা

হাটহাজারী প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় ছোটখাটো ঝামেলা হয়, ক্লাস বন্ধ থাকে।  কিন্তু এভাবে হাজারো ছাত্রের মিছিলের ঘটনা কওমি মাদরাসার ইতিহাসে শুধু বিরলই নয়, অনাকাঙ্খিতও বলা চলে।  তবু এ দৃশ্য দেখতে হলো।  বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।  দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস বর্জন ও অন্যান্য কাজ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
ছাত্রদের দাবিগুলো হলো- হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীকে অনতিবিলম্বে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার, ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বাস্তবায়নে সব ধরনের হয়রানি বন্ধ, বয়োবৃদ্ধ আল্লামা শফী শারীরিকভাবে অসুস্থ ও চলতে অক্ষম হওয়ায় তাকে মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা বানানো, মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগ কিংবা অপসারণের ক্ষমতা মজলিসে শুরাকে প্রদান, বিগত শুরার হাক্কানি আলেমদের পুনরায় নিয়োগ এবং শুরা থেকে বিতর্কিত ও চিহ্নিতদের বহিষ্কার।
বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা মাদরাসার মাইক থেকে এসব দাবির কথা জানান দিতে থাকে।  এ সময় বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে মাদরাসার পুরো মাঠ।  বিক্ষোভের সময় মাদরাসার গেট বন্ধ রাখা হয়।  আল্লামা শাহ শফী বিক্ষোভের সময় মাদরাসায় নিজ কক্ষেই অবস্থান করছিলেন।  তবে হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক মাওলানা আনাস মাদানী মাদরাসায় ছিলেন না, বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা তার রুমের আসবাব ভাঙচুর করেছে।  অপরদিকে গেটের বাইরে পুলিশের সতর্ক অবস্থান করতে দেখা গেছে।
অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ এই কওমি মাদরাসায় অসন্তোষ ও পারস্পরিক মতপার্থক্য চলছিল।  এরসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব ও বেফাকের দুর্নীতিজনিত অস্থিরতা নিয়ে উদ্ভুত ঝামেলা না মেটানোয় ফেসবুকে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছিল।
মাওলানা আনাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো- হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষকদের নিয়োগ-পদায়নে দুর্নীতি ও হস্তক্ষেপ, হেফাজতে ইসলাম, বেফাক-হাইয়ায় প্রভাব বিস্তার, আল্লামা বাবুনগরীকে নানাভাবে হয়রানি, নাজিরহাটসহ স্থানীয় কিছু মাদরাসায় নিয়োগ নিয়ে পিতা আল্লামা শফীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপব্যবহার করেছেন।  এসব কারণে মাদরাসার ছাত্রসহ স্থানীয় আলেমদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেই ক্ষোভেরই বিস্ফোরণ হলো আজকের এই বিক্ষোভ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাটহাজারী মাদরাসার একজন শিক্ষক বলেন, আমরা কোনোভাবেই বুঝতে পারিনি ছাত্ররা এভাবে মাঠে নেমে আসবে।  মাদরাসায় সিনিয়র সব শিক্ষকরা উপস্থিত রয়েছেন।  বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা শিক্ষকদের রুমের সামনে অবস্থান নিয়েছে।  আসলে, অব্যাহত জুলুম, পদে পদে সীমালংঘন, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারণে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এভাবে ঘটিয়েছে ছাত্ররা।  বিশেষ করে হাইয়াতুল উলইয়ার পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিতে গরিমসি এবং পরীক্ষার্থীদের আনাসবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে মাদরাসায় অবস্থানের অনুমতি দিতে বিলম্ব করাই- বিক্ষোভের অন্যতম কারণ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, মাদরাসার সব গেট বন্ধ করে রাখার পাশাপাশি শিক্ষকদেরও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।  পুলিশ-প্রশাসন যেন মাদরাসার ভেতরে ঢুকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করে সেজন্য ছাত্ররা মসজিদের মাইকে বারবার মাইকিং করছে।  ছাত্রদের দাবি, এটা সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলন নয়।

ডিসি/এসআইকে/এমএমইউএম