পরিস্থিতি থমথমে, হাটহাজারী মাদ্রাসায় পুলিশ মোতায়েন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার ভেতরে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবারও (১৭ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।  সারাদিনই মাদ্রাসার প্রতিটি ফটক বন্ধ থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থাতেই ছিলেন।  বৃহস্পতিবারও মাদ্রাসার ভেতরে শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়েছে এবং মাদ্রাসার শিক্ষক আনাস মাদানীকে অবিলম্বে বহিষ্কার কার্যকর না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে শিক্ষার্থীরা ভেতরের মসজিদ থেকে মাইকিং করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের শান্ত রাখতে সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হবে বলে শিক্ষকরা আশ্বাস দিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে হাটহাজারীর মাদ্রাসাটি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুই পক্ষের বিক্ষুব্ধ অবস্থানের পর বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোটা এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ-র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্য।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর গত ২৪ আগস্ট পুনরায় শুরু হয় হাটহাজারী মাদ্রাসার কার্যক্রম।  কিন্তু এর মধ্যে মাদ্রাসার পরিচালক আহমদ শফী এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বাবা আহমদ শফীর অসুস্থতার সুযোগে তার ছেলে আনাস মাদানী মাদ্রাসায় আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থীকে হয়রানি করছেন।  এমন অবস্থায় তারা আনাস মাদানীকে অবিলম্বে বহিষ্কারসহ ছয় দাবিতে গতকাল থেকে বিক্ষোভ করে আসছেন।  এর মধ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন যে, আহমদ শফী বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন যে মাদ্রাসাটি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেবেন।  সেইসঙ্গে তার ছেলের প্রত্যাহার আদেশে তিনি না বুঝে স্বাক্ষর করেছেন জানিয়ে আদেশটি বাতিল করবেন বলে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন।  এর পর পর তারা বেলা ১১টা নাগাদ আবার মাঠে নেমে বিক্ষোভ জানাতে থাকেন।  এসময় তারা মাদ্রাসার ভেতরে আহমদ শফীর কার্যালয়সহ, শিক্ষকদের থাকার জায়গায় ভাঙচুর করেছে বলেও জানান স্থানীয় সাংবাদিক আবু তালেব।
মাদ্রাসার ভেতরের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিনি এসব তথ্য পাওয়ার কথা জানান।
গতকাল ওই বিক্ষোভের পর মাদ্রাসাটির পরিচালনা কমিটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে- আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।  এই কমিটি আগামি শনিবার আবার বৈঠকে বসবে বলে জানায়।
এই সিদ্ধান্তের কারণে রাত ১১ টার পর বিক্ষোভকারীরা শান্ত হলেও আজ সারাদিন মাদ্রাসা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।  যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাদ্রাসার বাইরে কড়া অবস্থান নিয়ে পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত তিন শতাধিক সদস্য।  মাদ্রাসার গেইট বন্ধ থাকায় সেইসঙ্গে নির্দেশ না থাকায় তারা ফটকের বাইরেই অবস্থান নিয়েছেন।
তবে ভেতরে যদি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী থানার ওসি মাসুদ আলম।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে আজ মাদ্রাসার আশপাশের দোকান-পাট কেউ খোলেনি বলে জানা গেছে।  তবে মাদ্রাসার একজন শিক্ষক জানিয়েছেন- আজ সকাল থেকেই মাদ্রাসার ভেতরের পরিবেশ শান্ত এবং স্বাভাবিক রয়েছে।  ছাত্ররা যার যার ছাত্রাবাসে অবস্থান করছেন।  শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন যে, আনাস মাদানীর বহিষ্কারাদেশ যেন আজ-কালকের মধ্যেই কার্যকর করা হয়।
ছাত্রদের সব দাবি দাওয়া শিগগিরই মেনে হওয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকরা ছাত্রদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানান সেখানকার শিক্ষক আশরাফ আলী নিজামপুরি।  তিনি বলেন, ‌‘ছাত্ররা এখন মাদ্রাসার ভেতরে যার যার রুমে অবস্থান করছে।  ছাত্র-শিক্ষক সবাই নিরাপদে আছেন।  মাদ্রাসার সূরা কমিটি আছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।  আমরা শিক্ষার্থীদের বলছি আমাদের ম্যানেজিং কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে।  তোমাদের দাবি মেনে নেয়া হবে’।
বাংলাদেশ অন্যতম প্রাচীন হাটহাজারী মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অস্থিরতা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই।  মাদ্রাসার পরিচালক আহমদ শফীর পরেই জুনায়েদ বাবুনগরীর অবস্থান ছিল।  কিন্তু কয়েকমাস আগে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর নেতৃত্বে তার সমর্থকরা পরিচালনা কমিটির বৈঠক করে বাবুনগরীকে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়।  তখন থেকে দুটি গ্রুপের এই কোন্দল ঘনীভূত হয়।

ডিসি/এসআইকে/এসএজে