শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালিয়ে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে : জুনায়েদ বাবুনগরী

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, এই দেশ মুসলিম প্রধান দেশ।  এদেশের পুলিশ গুলি করে নিরীহ মুসলমান হত্যা করবে, এটি বরদাশত করা যায় না।  খুনি কর্মকর্তাদের তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।  আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর পুলিশ গুলি চালিয়ে চরম ব্যর্থতা ও বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে।  শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না।  খুনি মোদিকে খুশি করার জন্য যারা দেশের নিরপরাধ প্রতিবাদী নাগরিকদের হত্যা করতে দ্বিধা করে না, তারা জালিম এবং অত্যাচারী।  যারা ধর্ম ও মানবতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না, তারা জনগণের কাছে সবসময় ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যাত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে মোদি বিরোধী আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ, নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ এবং হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঘোষিত দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের অংশ হিসেবে শুক্রবার (২ এপ্রিল) হাটহাজারী উপজেলা হেফাজতের ব্যবস্থাপনায় হাটহাজারী ডাক বাংলো চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
১১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষপাতমূলক বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক ও ধর্মপ্রাণ প্রতিবাদী জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে একদল গণবিচ্ছিন্ন তথাকথিত বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতিকে আমরা অমানবিক, উস্কানিমূলক ও গণবিরোধী বলে সাব্যস্ত করছি।  এই বিবৃতি স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের নির্লজ্জ দালালির প্রমাণ বহন করে।  পুলিশের গুলিতে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা না জানিয়ে একতরফাভাবে প্রতিবাদী জনতার গণপ্রতিরোধকে আপনারা তথাকথিত ‘তাণ্ডব’ আখ্যা দিয়ে গণবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।  ইসলাম বিদ্বেষ ও সেকুলার মতাদর্শে আপনারা এতই অন্ধ যে, আপনাদের বিবৃতিতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া ২০ জন নাগরিকের প্রতি কোনো ধরনের মানবিক সমবেদনা প্রকাশ পায়নি।  বরং আপনারা বিবেকবুদ্ধি জলাঞ্জলি দিয়ে দালালির নজরানা পেশ করতে প্রতিবাদী ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ওপর ‘সর্বশক্তি প্রয়োগে’র আহ্বান জানিয়ে প্রকারান্তরে জালিম ক্ষমতাসীনদেরকে মানুষ হত্যায় উৎসাহ দিয়েছেন।
বাবু নগরী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর হয়ে গেছে।  পাকিস্তান এখন অতীত ইস্যু।  আপনারা চিন্তা ও বুদ্ধিতে এতই পশ্চাদপদ যে, আজও পাকিস্তানি জুজু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আছেন।  ফলে পাকিস্তানি জুজুকে অতিক্রম করে সামনে এগোতে পারছেন না।  বরং পাকিস্তান জুজুকে ছদ্মভাবে আপনারা ইসলাম বিদ্বেষের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।  এই গণবিরোধী বিবৃতি আপনাদের ইসলাম বিরোধী মুখোশ খুলে দিয়েছে।  আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, এদেশ কখনোই পাকিস্তানের পথে যাবে না; কিন্তু আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করার চক্রান্ত আমরা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলে নস্যাৎ করে দেবো, ইনশাআল্লাহ।
নিহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশের বর্বরোচিত হামলায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, আহতদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং যে ৩৬ জনের নামে মামলা হয়েছে তাসহ হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে করতে হবে। 

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা শাখার সভাপতি ও হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা সচিব মাওলানা শোয়াইব জমিরীর সভাপতিত্বে ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল হোসাইন, যুগ্ন সম্পাদক মাওলানা এমরান সিকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কামরুল ইসলাম এর যৌথ সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের ত্রাণ ও পূনর্বাসন সম্পাদক মুফতী মুহাম্মদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস, কেন্দ্রীয় সহঅর্থ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সহত্রাণ ও পূনর্বাসন সম্পাদক মাওলানা জুনাইদ বিন ইয়াহইয়া।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী পৌরসভা শাখার সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম মেহেদী, সহসভাপতি মাওলানা হাফেজ আলী আকবর, হাটহাজারী উপজেলা সহসাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ, পৌর সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, হেফাজত আমীরের ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা ইন’আমুল হাসান ফারুকী, মাওলানা সোহাইল চৌধুরী, মাওলানা হাফেজ আব্দুল মাবুদ, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা হাবিব উল্লাহ হাবিব নেতৃবৃন্দ।

ডিসি/এসআইকে/এমএমইউএম