হামলা-সংঘর্ষে শেষ হলো লোহাগাড়ার তিন ইউপির নির্বাচন, চলছে গণনা

দক্ষিণ জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বেশ কয়েকটি হামলা-সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার তিনটি ইউপির নির্বাচন।  লোহাগাড়া সদর, আধুনগর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে।
নির্বাচন কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা গেছে, সকাল ৯ টা থেকে ভোটাররা সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন।  দুপুরের দিকে প্রচন্ড গরমের কারণে প্রায় সকল কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
লোহাগাড়া ইউনিয়নের নজিমুন্নেসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরীর চালক আহত হন বলে জানা গেছে।  এছাড়াও একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থীর দু-গ্রুপের সংঘর্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির পেছনে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা।
এদিকে, দক্ষিণ আধুনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১২টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও দুপুর ২ টার দিকে কেন্দ্রের মধ্যে বহিরাগতরা প্রবেশের চেষ্টা চালায়।  পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এজেন্ট জানান, আমাদের কেন্দ্রে চুনতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের অনুসারী আক্তার, পল্টু, শেখ ছোটনসহ বেশ কয়েকজন হামলা করে দখলের চেষ্টা চালিয়েছেন।  পরে ম্যাজিস্ট্রেট আর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনিক জানান, দুর্বৃত্তরা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে।  আমরা কেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইনামুল হাছান বলেন, দু-গ্রুপের সংঘর্ষ সমাধান করে ফেরার পথে কারা ককটেল ছুঁড়ে মেরেছে বুঝতে পারিনি।  তবে আমাদের কেউ আহত হননি এবং তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি।
এছাড়াও উপজেলার আমিরাবাদ সুফিয়া আলীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রসহ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা সংঘর্ষে জড়ালে দুইজন আহত হয়।  এ সময় ভোট গ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়।  কয়েকটি বুথে দুর্বৃত্তদের হামলার কারণে ভোট স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান প্রিজাইডিং অফিসাররা।  তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষণিক উপস্থিতিতে পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনিক জানান, দুটি জায়গায় নির্বাচনে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।  যেকোনো ঘটনা এড়াতে কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন রোমান খান বলেন, বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।  কোনো বহিরাগত নির্বাচনে আসার সুযোগ ছিল না।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে ছিলেন।  এছাড়াও মোবাইল টিমের মাধ্যমে তিন ইউনিয়নে তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে ছিলেন।  এককথায় বলতে গেলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে আধুনগরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল কবির, লোহাগাড়া সদরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নুরুচ্ছফা চৌধুরী ও আমিরাবাদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসএম ইউনুস নৌকার মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন।  অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বাবুলের সমর্থন নিয়ে তিন ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন তিন জন।  আমিরাবাদ ইউনিয়নে মাহমুদুল হক পেয়ারু, লোহাগাড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহাবউদ্দিন চৌধুরী এবং আধুনগর ইউনিয়নে নাজিম উদ্দিন।

ডিসি/এসআইকে/আরআর