বৃষ্টি-জোয়ার একাকার, দুর্ভোগে চট্টগ্রামবাসী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রাম নগরের নিম্নাঞ্চলে কয়েকদিন ছিল বৃষ্টিহীন অস্বাভাবিক জোয়ারের তাণ্ডব।  কিন্তু শুক্রবার (২১ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে এসব এলাকার মানুষের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস শনিবার (২২ আগস্ট) বিকেল ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড করেছে ১০২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।  জোয়ার ও বৃষ্টির পানি একাকার হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন চট্টগ্রামবাসী।  দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, শান্তিবাগ, হালিশহর, সিডিএ আবাসিক, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকায় কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরপানিতে মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ রসুন আদার বড় বিপণিকেন্দ্র হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, আজও খাতুনগঞ্জের মূল সড়ক ডুবে গেছে।  অনেক আড়তের সামনে পেছনে জোয়ারের পানি না ঢোকার জন্য দেয়াল তুলে দিলেও মেঝের নিচ থেকে পানি ঢুকে যাচ্ছে।  কম বেশি সবাই পানির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত।
খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হলে কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং, নদীপাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেওয়া, খালগুলোর মুখে স্লুইসগেটগুলোর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা, খালগুলো খনন, খালের পাড়ে সড়ক নির্মাণ করে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নিয়মিত খনন, পাহাড়ি বালু ধরতে সিলট্রেপ তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে।
শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা এমএ কাদের বলেন, এক সপ্তাহ ধরে জোয়ারের পানিতে সড়ক ডুবছে, বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকছে।  শান্তিবাগের শান্তি কেড়ে নিয়েছে পানি।  এখন আমাদের এলাকাকে মানুষ পানিবাগ বলে টিটকারি মারে।
বেপারী পাড়ার বাসিন্দা আবু দাউদ বলেন, বছরের পর বছর পোর্ট কানেকটিং রোডের বেহাল দশা, জোয়ারের পানি, জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালি এসব মিলে এখন আর আমাদের বাসা-বাড়িতে অতিথি আসতে চায় না।  এলাকার নিত্যদুর্ভোগের জন্য ভালো জায়গায় আত্মীয়তাও করতে পারি না।
সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল জানিয়েছেন, শনিবার প্রথম জোয়ার শুরু হয়েছিল সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে।  এরপর বিকেল ৩টা ৩৯ মিনিটে ভাটা শুরু হয়।  দ্বিতীয় জোয়ার শুরু হবে রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে এবং ভাটা ৩টা ৩৯ মিনিটে।  চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদীবন্দরকে ১ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি দেখাতে বলা হয়েছে।  তিনি জানান, রোববার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকার আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সাময়িকভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে।  অনেক জায়গায় থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।  তা ছাড়া ভারতের মধ্যপ্রদেশের মধ্যভাগ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের উত্তর পশ্চিম ভাগ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।  উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে এবং সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে।  এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১২-১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে, যা অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে সর্বোচ্চ ৩৫-৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ