সিডিএ : বছরজুড়ে নিশ্চুপ দোভাষ কৃতিত্ব নিলেন কাজের

রোকসানা রুনা, নগর প্রতিবেদক >>>
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসাবে এম জহিরুল আলম দোভাষের একবছর পূর্ণ হয়েছে।  দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই প্রায় নিশ্চুপ ছিলেন তিনি।  দায়িত্ব নেয়ার একবছরে মূলত সাবেক চেয়ারম্যানের নেয়া প্রকল্পগুলো দেখভালই করেছেন তিনি।  অথচ শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে সিডিএ’র চলমান সব প্রকল্পের কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।  ২০১৯ সালের এপ্রিলে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এম জহিরুল আলম দোভাষ।  এসময় নতুন মাস্টারপ্ল্যান ও অনন্যা উপশহর গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখান নগর আওয়ামী লীগের এই সহ-সভাপতি।
সিডিএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যানের আমলে অধিকাংশ কাজ শেষ হওয়া আউটার রিং রোড প্রকল্প সম্পর্কে এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের সড়কটি ছিলো পুরো মাটির।  সড়কটি আমি এখন কার্পেটিং করে টোল রোড দিয়ে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করেছি।  এখন পর্যন্ত ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে এই প্রকল্পের।  বাকি কাজ ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে শেষ হবে।
দায়িত্ব গ্রহণের আগেই কাজ শুরু হওয়া কর্ণফুলী সেতু থেকে কালুঘাট সেতু পর্যন্ত সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প প্রসঙ্গে দোভাষ বলেন, কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।  এই প্রকল্পের প্রায় ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
একইভাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে কাজ শুরু হলেও এখনো সঠিক গতিপথ ঠিক করতে না পারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নিয়ে জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়।  মাঝখানে সেটা আটকে যায়।  আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার শুরু করেছি।  ইতোমধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে।  সবমিলিয়ে এই প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৩৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, যে সব ফাইল দীর্ঘদিন যাবত আলোর মুখ দেখেনি সে সব ফাইল বা প্রকল্প আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর চলমান করেছি।  সিডিএ’র নির্মিত উড়ালসেতু সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে।  এগুলো তদারকির দায়িত্ব এখন তাদের।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও কাজ শেষ করতে না পারা জলাবদ্ধতা প্রকল্প নিয়েও অগ্রগতির কথা জানান জহিরুল আলম দোভাষ।  তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুন:খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ চলছে।  সিডিএ’র মাধ্যমে প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর করছে।  এ প্রকল্পে ৩৫ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি এবং ৫০ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে।  এই কাজটিও বন্ধ ছিলো।  আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার শুরু করেছি।  গত এক বছরে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি।  যার কারণে এবার চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা হয়নি।  কিছু জায়গায় জোয়ারের পানি উঠেছে।  স্লুইচ গেট বন্ধ করে দিলে সেটার সমাধানও হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বায়েজিদ বোস্তামি থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইপাস সড়ক হয়েছে।  এই কাজের অগ্রগতি ৮১ শতাংশ।  ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। এছাড়া বাকলিয়া এক্সেস রোড নির্মাণ প্রকল্পের কাজে ৮৩ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে।  আর্থিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। এছাড়াও রাজস্ব খাত থেকে আমরা সল্টগোলায় একটি শপিং মলসহ আধুনিক বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছি।  এই শপিং মলের ৯৭ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি শেষ হয়েছে।  আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ৯০ শতাংশ।  তিনি বলেন, নাসিরাবাদে একটি সিডিএ স্কয়ার ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।  লটারির ভিত্তিতে এখানে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে।  এই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২৭ শতাংশ।  আর ভৌত অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ।  এছাড়াও দেওয়ানহাট পোস্তার পাড় এলাকায় একটি ১০ তলাবিশিষ্ট ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।  এই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ।  আর ভৌত অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে দায়িত্ব গ্রহণের আগের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন দোভাষ।  এসব প্রকল্প সাবেক চেয়ারম্যানের আমলেই কাজ শুরু হয়ে এখনো চলমান আছে।  অবশ্য বর্তমান চেয়ারম্যান অনন্যা উপশহর ও নতুন মাস্টারপ্ল্যানের স্বপ্নের কথাও জানান।  তিনি বলেন, অনন্যা উপশহর এলাকা তৈরি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।  সেটা আমাদেরকেই বাস্তবায়ন করতে হবে।  আমরা ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে টাকা পেলে, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ করবো।  এখন জায়গা অধিগ্রহণ করার জন্য যৌথ জরিপ চলছে।  চট্টগ্রাম শহর নিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ শিগগির শুরু হবে।  মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কর্নেল আবুল হাসনাত মো. সায়েম, সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান।  এ সময় সিডিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিসি/এসআইকে/আরআর