আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকতা ছিল না বিধায় সেগুলো মানুষ জানতে পারত না : তথ্যমন্ত্রী

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা দলগতভাবে অপকর্ম করেছে।  নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারী, ষাট বছর বয়সী নারী পর্যন্ত কেউ রক্ষা পায়নি বিএনপির লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর হাত থেকে’।  ‘নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব বলেন।
শনিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বাংলাদেশ বেতারের উদ্যোগে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নারী নির্যাতন-ধর্ষণগুলো দলগতভাবে অতীতে করেছে এ নিয়ে যখন তারা কথা বলে, তখন হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়।  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য হাস্যকর’।  তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা যখন কথা বলেন তখন ভুলে যান তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন কি করেছে।  এজন্য এ রকম লাগামহীন কথা বলতে পারেন।  বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার এ ধরনের ঘটনা অতীতে যেগুলো ঘটেছে সেগুলোর বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে।  এখনও যেগুলো ঘটছে সেগুলোরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য বদ্ধপরিকর’।
বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, চট্টগ্রাম বেতারের পরিচালক এসএম আবুল হোসেন প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা অবশ্য আমাদের সময় দিচ্ছেন না বহু আগে থেকে।  ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠনের তিন মাসের মাথা থেকে আমাদের কখনও সময় দিতে চাননি।  কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জনগণ আমাদের সময় দিয়েছে।  প্রায় পৌনে ১২ বছর ধরে শেখ হাসিনা একটানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন, সুতরাং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব সময় দিলেন কি দিলেন না, সেটি বড় ব্যাপার নয়, জনগণ সময় দিচ্ছে কিনা সেটিই হচ্ছে মুখ্য বিষয়’।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে।  স্থানীয় সরকার পর্ষদে ৩৩ শতাংশ নারীর জন্য সংরক্ষিত কোটা তিনিই করেছিলেন।  নারী সংসদ সদস্যের সংখ্যা পঞ্চাশে উন্নিত করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।  দেশের ইতিহাসে প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্পিকারসহ নানা পদে নারীর পদায়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই হয়েছে।  নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নতি হয়েছে সেটা পৃথিবীর সামনে বড় উদাহরণ’।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে যেই ঘটনাগুলো ঘটছে এগুলো যে আগে ঘটেনি তা নয়।  কিন্তু আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকতা ছিল না বিধায় সেগুলো মানুষ জানতে পারত না।  নোয়াখালীর ঘটনাটা কোনো টেলিভিশন কিংবা কোনো পত্রপত্রিকায় এমনকি কোনো অনলাইনেও প্রথম প্রকাশ করেনি।  এটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, এরপর অন্যান্য মূলধারার গণমাধ্যম সেটি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে।  অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে কিন্তু এখন কোনো ঘটনাই ঢাকা থাকে না।  এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভালো দিক।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বেতারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন স্বাধীন বাংলা বেতারের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।  দেশ বিনির্মাণে বেতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।  বেতারের অনেকগুলো অনুষ্ঠান অত্যন্ত ভালো এবং জনমানুষের কাছে সেই অনুষ্ঠানমালার ব্যাপক আবেদন রয়েছে।  আমাদের কৃষ্টি সংস্কৃতিকে লালন করার ক্ষেত্রে বেতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বেতারই কিন্তু মানুষের কাছে খবর পৌঁছায়।  বর্তমানে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্মার্টফোনের ব্যাপকতা বেড়েছে তখন একটি রেডিও বহন করা সম্ভবপর নয়।  তাই রেডিওকে অ্যাপসের মাধ্যমে টেলিফোনের আনার উদ্যোগ নিয়েছি।  এখন অ্যাপসের মাধ্যমে বিভাগীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ বেতার মোবাইলেও শোনা যায়’।
তিনি বলেন, ‘১০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও আশপাশে পাহাড়সহ নানা কারণে ফেনীতেও চট্টগ্রাম বেতারের অনুষ্ঠান শোনা যায় না।  অথচ ১০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন খুলনা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রতিবন্ধকতা না থাকায় এখানে শোনা যায়।  গুরুত্ব বিবেচনায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ নানা সংবাদ এবং কৃষ্টি সংস্কৃতির চাহিদা রয়েছে সারাদেশে।  আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকা কেন্দ্রের মতো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে আপলিঙ্ক করে সেটি আবার বিভিন্ন বেতার কেন্দ্রে ডাউনলিঙ্ক করে সারাদেশে যেভাবে শোনানো হয় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানও খুব সহসা সেভাবে উদ্বোধন হবে।  এটি চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের ইতিহাসে বিরাট মাইলফলক হয়ে থাকবে’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ