মুজিববর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগর আ’লীগের সাম্পান র‌্যালি

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে না।  চট্টগ্রাম বন্দর না বাঁচলে বাংলাদেশের বেঁচে থাকার কোন অর্থ হয় না।  তাই কর্ণফুলীকে বাঁচানো শুধু চট্টগ্রামবাসী নয়, রাষ্ট্র, সরকার ও দেশের ১৮ কোটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।  তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদী, বুড়িগঙ্গা নদীসহ দেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীগুলোকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তার শতভাগ বাস্তবায়ন চাই।
শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে কর্ণফুলী নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার প্রত্যয়ে জনসংহতি, সম্পৃক্তকরণ ও কর্ণফুলী রক্ষায় আয়োজিত সাম্পান র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে উদ্বোধকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
কর্ণফুলী নদীবক্ষে একটি বড় জলপরিবহনের ওপর স্থাপিত সভামঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, লুসাই পর্বতই কর্ণফুলী নদীর উৎস।  সেখান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।  এই কর্ণফুলী নদীর তীরেই বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক বন্দর গড়ে উঠেছে প্রায় ২০০০ বছর আগে।  এই বন্দর জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড।  অথচ যে নদীটির তীরে চট্টগ্রাম বন্দর গড়ে উঠেছে তাকে চেতন বা অবচেতন মনে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক ও পলিথিন আগ্রাসনে এবং নানা ধরনের অপচনশীল বর্জ্যে কর্ণফুলী নদীর প্রায় ২০ ফুট গভীরতা কমে গেছে।  ২০ ফুটের এই পলেস্তরার কারণেই নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং চালানো দুরূহ হয়ে পড়েছে।  এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী প্রায় ৮০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে কম করে হলেও ৩০০ টিরও বেশি কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।  এই শিল্প ও কলকারখানাগুলোর দূষিত তরল বর্জ্য নদীতেই ফেলা হচ্ছে।  তাই এই নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।  মৎস বিচরণের পরিবেশ নেই বললেই চলে।
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন চট্টগ্রাম ওয়াসার সুয়্যারেজ সিস্টেম কর্ণফুলী নদীমুখি হবে কেন?  কর্ণফুলী নদীতে নিয়মিত ড্রেজিং করা সম্ভব না হওয়ায় চট্টগ্রামে খাল, নালা, নর্দমা থেকে পানি নদীতে যেতে পারলেও এই নদীর ধারণক্ষমতা নেই কেন?  তাই জোয়ারের পানিসহ বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে।  তিনি বলেন, এই কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে চট্টগ্রাম বন্দর।  তাদের বার্ষিক আয় ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।  তাদের তহবিল থেকে একটি ন্যূনতম অংশ যদি কর্ণফুলী রক্ষায় ও চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হয় তাহলে কর্ণফুলী বাঁচবে এবং চট্টগ্রাম নগরের চেহারা পাল্টে যাবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য অতিথিরা বলেন, কর্ণফুলী শুধু একটি নদী নয় জাতীয় অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ।  কর্ণফুলী বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা।  কর্ণফুলী নদীতে যাতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে এবং নদী ভরাট করে যেন দখল না হয়, আমরা কেউ যেন সামান্য পরিমাণও কর্ণফুলী নদীকে দূষিত না করি।  তাহলে কর্ণফুলী নদী রক্ষার উদ্যোগ অনেকাংশে সফল হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদের সঞ্চালনায় এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত সাম্পান র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন শফর আলী, মশিউর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ হোসেন, আবু তাহের, সাইফুদ্দীন খালেদ বাহার, বেলাল আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, আলীউর রহমান, সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, মাঝি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, জাফর আহমদ, সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব প্রমুখ।
সাম্পান র‌্যালি অভয়মিত্র ঘাট থেকে শুরু হয়ে কর্ণফুলী ব্রীজ পর্যন্ত গিয়ে আবার অভয়মিত্র ঘাটে ফিরে আসে।  এই র‌্যালিতে সুসজ্জিত ১০০টি সাম্পান অংশ নেয়।  এসময় নদীর তীরে সমবেত হাজার হাজার মানুষ হাততালি দিয়ে সাম্পান র‌্যালিকে অভিবাদন জানান।

ডিসি/এসআইকে/আরআর