লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন, পতেঙ্গা লোকারণ্য

নাহিদা জাহান জুঁই, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে।  সোমবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১১ টার পর থেকেই চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল-২, অভয়মিত্র ঘাট এবং কালুরঘাট সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া শুরু হয়।  হালিশহর, দক্ষিণ কাট্টলী, অভয়মিত্রঘাট, কর্ণফুলী, সীতাকুণ্ডসহ বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে দেবী দুর্গাকে বিসজর্ন দেয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।  বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে শুরু করে তারা।
তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভিড় করেছেন ভক্ত ও অনুরাগীরা।  নানা ধর্মের, নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান লাখো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।  হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসেছেন দোলায় চড়ে। কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন গজে (হাতি) চেপে। ‘দোলায়াং-মড়কং-ভবেৎ। ’ অর্থাৎ মা দোলায় এলে দেখা দেয় মড়ক।  আবার ‘গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা’৷  অর্থাৎ মা গজে গমন করলে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্য ফলন ভালো হয়৷  সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ থাকে মর্ত্যভূমি৷
বেলা ১১ টার পর থেকেই চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ট্রাকবাহী প্রতিমা নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পূজারী ও ভক্তরা জড়ো হতে শুরু করেন পতেঙ্গা সৈকতসহ সমুদ্রের বিভিন্ন তীরবর্তী পয়েন্টে।  এরপর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের পালা।  তবে করোনা ভাইরাসের কারণে এবার শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়নি।  শঙ্খ উলুধ্বনির পাশাপাশি বাদ্যের ঘণ্টা বাজিয়ে ‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’ বলে একের পর এক প্রতিমা ভাসিয়ে দেওয়া হয় সাগরে।  বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৬০ টির মতো প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিসর্জনের সময় বাঁধা থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন করতে দেখা গেছে।  এটি শেষ করতে করতে রাত ১০টা পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। 
সোমবার মহাদশমীতে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা।  দুর্গার বিদায় উপলক্ষে সকাল থেকে বিদায়ের সুর বেজে উঠে বিভিন্ন মণ্ডপে।
পতেঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সাগরে প্রতিমা বিসর্জন দিচ্ছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।  নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সৈকত ও আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।  করোনা ভাইরাসের কারণে এবার প্রতিমা বিসর্জনে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে।  এসব মেনেই সাগরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে।  বেশি মানুষের সমাগম করতে দেওয়া হচ্ছে না।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার জানান, নগরের ১৬টি থানায় ২৭৩টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়।  পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে সোমবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।  তবে নির্ধারিত সময়ে বিসর্জন পর্ব শেষ করা যাচ্ছে না।  পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি রাত ১০টা পর্যন্ত চলতে পারে।  তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এবার শোভাযাত্রা, ধর্মসভা এবং প্রতিমা নিরঞ্জন করা হচ্ছে না।  ধর্মীয় রীতি মেনে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল-২, অভয়মিত্র ঘাট এবং কালুরঘাট সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।

ডিসি/এসআইকে/এনজেজে