চসিকের দায়িত্ব নিলেন ‌‘নতুন মেয়র’ রেজাউল

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ‘নতুন মেয়র’ রেজাউল করিম চৌধুরী।  এসময় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে অভিনন্দন জানান।  দায়িত্ব নিয়েই রেজাউল ‘চট্টগ্রাম নগরীকে মশামুক্ত করা’র উপর জোর দিয়েছে।  বলেছেন- মশার উপদ্রপ থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করাই আমার প্রথম কাজ।  সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পরামর্শ নিয়ে আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে চট্টগ্রামকে একটি মডেল শহরে পরিণত করারও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সোয়া ২ টার দিকে নগরীর টাইগারপাস সংলগ্ন বাটালি হিল এলাকায় চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন রেজাউল করিম চৌধুরী।  এর আগে, নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সুধী সমাবেশে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের পরামর্শ শোনেন তিনি।  সমাবেশ শেষে সরাসরি তিনি চসিকের কার্যালয়ে যান।
সুধী সমাবেশ ও দায়িত্ব গ্রহণের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘মশার উপদ্রবে নগরবাসী অতীষ্ঠ।  আমার প্রথম কাজ হবে মশা নিয়ন্ত্রণ।  ১০০ দিনের মধ্যে নগরীর যেসব রাস্তায় খানাখন্দ আছে, সেগুলো সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করব।  তবে সব রাস্তা ১০০ দিনের মধ্যে মেরামত করা সম্ভব হবে না।  বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব বিশৃঙ্খলা আছে, সেগুলো দূর করে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা করব’।
রেজাউল করিম বলেন, ‘মানুষ একটু শান্তি চায়, সুন্দরভাবে বসবাস করতে চায়।  আমি মানুষকে শান্তি ও স্বস্তির নগরী উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব’।
সুধী সমাবেশে মন্ত্রী, হুইপ, সংসদ সদস্যসহ ৩০ জনেরও বেশি বক্তা বক্তব্য রাখেন।  প্রায় সবাই বক্তব্যে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মকাণ্ডের উদাহরণ দেন এবং রেজাউলকেও একই পথ অনুসরণের তাগিদ দেন।  ঠিক একবছর আগে এই দিনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন রেজাউল।  মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা থেকে ফেরার পর সংবর্ধনায় রেজাউল জানিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি মহিউদ্দিনের পথে চলবেন।  তবে সুধী সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে রেজাউল মহিউদ্দিনের বিষয়ে কিছুই বলেননি।
সমাবেশে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী একজন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন, আবার তিনি জনতার নেতাও ছিলেন।  এমন একজন নেতা চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আর আসবেন কি না, জানি না।  মেয়র সাহেবকেও বলব- জনগণ আপনাকে ভোট দিয়েছে, আপনার দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে।  মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো জনতার নেতা হওয়াটাই আসল।  অনেকে রেজাউল সাহেবের জন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা দাবি করেছেন।  দাবি করা উচিত হবে না। কাকে কোন মর্যাদা দেবেন, সেটা প্রধানমন্ত্রী ভালো জানেন।  দাবি প্রধানমন্ত্রী পছন্দ করেন না’।
সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অনেকে পদে গেলে সবজান্তা হয়ে যান।  ফ্লাইওভার দরকার ছিল কি না, সিডিএতে আমার মামা (সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম) তা কারও কাছে জানতে চেয়েছেন কি না জানি না।  অথচ তিনি আমাদের পরামর্শ নিতে পারতেন।  তিনি রাজনীতিতে এসেছেন আমাদের অনেক পরে।  প্রকৌশলীদের পরামর্শ শুনে ফ্লাইওভার বানিয়ে ফেলেছেন।  এরপরও বলব- উনি অনেক কাজ করেছেন।  মেয়রকে বলব- জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে।  আমরা রেজাউল করিম চৌধুরীকে নয়, চট্টগ্রামবাসীকে সহযোগিতা করব।  মাত্র ছয় মাসে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।  এটার জন্য দেশপ্রেম দরকার হয়।  জনপ্রিয় নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চট্টগ্রামের প্রতি প্রেম ছিল।  এজন্যই তিনি পেরেছিলেন’।
চসিকের বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘সবার পরামর্শ নিয়ে যোগদানের এ উদ্যোগ সবাই মনে রাখবে।  এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও এভাবেই পরামর্শ নিতেন।  মাননীয় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন, উনি অবশ্যই সফল হবেন।  ছয় মাস দায়িত্ব পালন করেছি।  পরামর্শ হচ্ছে- আয় বাড়াতে হবে।  কিন্তু মানুষের ওপর ট্যাক্স চাপিয়ে আয় বাড়ানো যাবে না।  শহরকে যারা ব্যবহার করছে, তাদের সারচার্জ আইন করে নির্ধারণ করতে হবে।  নগরবাসী মাত্র ২০ শতাংশ নগরীকে ব্যবহার করে।  যে ট্যাক্স একজন সাধারণ নাগরিক দেবে, তা বন্দর দিলে হবে না।  ৩০ হাজার ট্রাক নগরীতে ঢোকে প্রতিদিন।  তাদের ট্যাক্সের আওতায় আনতে হবে’।
চসিকের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র হওয়ার পরে প্রতিটি আইনি বিষয়ে আমার পরামর্শ নিতেন।  ভয় দেখিয়ে উনাকে কখনও দমিয়ে রাখা যায়নি।  নতুন মেয়রকেও বলব- দুর্নীতি দমন কমিশনকে ভয় করে কাজ করবেন না।  অনেক কাজ করতে গেলে মামলার আসামি হতে হবে’।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে অনেক কাজ হয়েছে, কিন্তু সমন্বিতভাবে হয়নি বলে মনে হচ্ছে দৃশ্যমান নয়।  সব উন্নয়ন হলেও মানসিকতার পরিবর্তন আমরা করতে পারিনি।  রাস্তাঘাট হলে উন্নতি হয় না, যদি নৈতিকতার উন্নয়ন না হয়।  দেশের দ্বিতীয় বড় শহরের নাগরিক ময়লাটা রাস্তায়-নালায় ফেলি, সড়কে দোকান করছি।  সমন্বয়ের জন্য মেয়রকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন।  ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে তার যে অবস্থান, তাতে অন্য সরকারি সংস্থার প্রধানরা আসতে চান না।  শুধু অর্নামেন্টাল মর্যাদা দিলে হবে না, নির্বাহী ক্ষমতা কতটুকু সেটাও দেখতে হবে।
সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘উন্নয়নে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মডেল অনুসরণ করলে চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে’।
সুধী সমাবেশে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদে, চবি’র সাবেক উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, বিএমএম নেতা শেখ শফিউল আজম, আইইবি’র সভাপতি প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, চসিকের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী নগর মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, প্রকৌশলী মো. হারুন, চুয়েট উপাচার্য ড. রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিাচলক মো. ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী, সিডিএ’র চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর