নগরবাসীর আস্থা-বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে হবে : রেজাউল

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, কর্পোরেশনের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদ একটি যৌথ পরিবার।  একই ছাতার নিচে আমরা থাকি।  একে অপরকে জানতে হবে, বুঝতে হবে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কাজ ভাগাভাগি করে সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।  তিনি আরো বলেন, সমস্যা আছে এবং থাকবেই।  মেধা, দক্ষতা, সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।  নগরবাসী আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে আমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন।  তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে হবে।
তিনি মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৬ষ্ঠ পরিষদের প্রথম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন।
মেয়র আরো বলেন, অতীত নিয়ে কিছু বলতে চাই না।  এখন যা আছে তা নিয়েই যাত্রা শুরু করে দিয়েছি।  প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিক জরুরি কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে পর পর দু’দিন মশক নিধন, পরিচ্ছন্নতাসহ জরুরি সেবামূলক কার্যক্রম চলবে।  এই কাজে যারা নিয়োজিত তাদের তদারক ও নির্দেশনা দেবেন কাউন্সিলররা।  নিয়োজিত জনবলের প্রতিদিনের নির্ধারিত কর্মঘন্টাকে তারাই কাজে লাগাবেন।  সুযোগ পেলেই সকলে ফাঁকি দেয়।  কেউ যাতে ফাঁকি দিতে না পারে সে ব্যাপারে কাউন্সিলরদের নজরদারি করতে হবে।  তিনি আশা করেন, কাউন্সিলররা যথাযথ তদারকি ও নজরদারি সঠিকভাবে করলে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনার সুফল নগরবাসী অবশ্যই পাবে।
সাধারণ সভায় কাউন্সিলরদের উত্থাপিত মতামত, অভিযোগ ও পরামর্শের প্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, নীতি ও ন্যায্যতার প্রশ্নে কখনো মাথা নত করবো না।  যে সকল অবৈধ দখলদার এবং নালা-নর্দমা-খালের উপর অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে তারা যতই ক্ষমতাবান হোন না কেন তাদের তিল পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না।  তিনি নগরীতে হাইরাইজ ভবন নির্মাতাদের পাইলিংয়ের মাটিভরা তরল বর্জ্য নালা-নর্দমা-খালে ফেলে পানিপ্রবাহের পথ ভরাট করার সমালোচনা করে বলেন, তারা বিবেকবর্জিত দুষ্টু প্রকৃতির অপদার্থ।  তাদের কারণেই নালা-নর্দমা-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।  এদের আইনের আওতায় এনে জরিমানাসহ বিধিবদ্ধ শাস্তিভোগ করতে হবে।  তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কর্পোরেশনের জায়গায় কেউ হাত দিতে পারবে না।  এসব জায়গা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও আমানত।  যারা এর কোনো অংশ অন্যায়ভাবে হস্তগত করেছেন সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হবে।  তিনি প্রশ্ন করেন, ফুটপাত থেকে বার বার হকারদের উচ্ছেদ করার পর আবার বেদখল হয়ে যায় কেন?  ধীরে সুস্থে এই সমস্যার পরিকল্পিত সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।  আমি তগিঘড়ি করে লোকদেখানো কিছু করতে চাই না।
তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই প্রকল্পের ৪০ ভাগের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে।  এই প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে চাক্তাই খালসহ বিভিন্ন খালে কিছু স্থানে বাঁধ দেয়ায় পানি চলাচল রুদ্ধ হয়ে গেছে।  তাই বর্ষা মৌসুমে ওভার-ফ্লো হতে পারে।  একারণে এবছরও জলাবদ্ধতা মুক্ত হওয়া যাবে না।  তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের খালের যে অংশে বাঁধ দেয়া হয়েছে সেখানে পানি চলাচলের জন্য বিকল্প পথ তৈরি করে দেয়ার পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পরিচ্ছন্ন বিভাগের অনেকেই আছেন যারা হাজিরা দেন কিন্তু কাজে নেই।  কোন স্তরে কত জনবল আছে তা জানতে হবে এবং কারা কি কাজ করছে, কর্মঘন্টা কতক্ষণ তা যাচাই-বাছাই করে এই বিভাগতে ঢেলে সাজানো হবে।  কেননা সিটি কর্পোরেশনের একটি টাকাও অপচয় করা যাবে না।  তিনি আরো বলেন, মশক নিধনের যে ওষুধ ছিটানো হয় তাতে কাজ হচ্ছে না বলে অভিমত রয়েছে।  আমি এই ওষুধের কার্যকারিতার মান নির্ণয় ও কেমিক্যাল টেস্ট আছে কিনা তথ্য জানতে বলেছি।  তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য যে স্প্রে মেশিনগুলো কেনা হয়েছে সেগুলো নিম্নমাণের।  অনেকগুলো অচল হয়ে গুদামজাত হয়েছে।  একইভাবে বিদ্যুৎ বিভাগ যে সড়কবাতিগুলো কিনেছে যেগুলোর বেশির ভাগই ২/১ মাস পর নষ্ট হয়ে যায়।  তাই সড়ক আলোকায়ন সুচারুভাবে সম্পাদন হচ্ছে না।  ফলে বড় এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় নাগরিক অস্বস্তিতে আছে।  তিনি আরো বলেন, নগরীর বেহাল সড়কগুলো মেরামত করতে যে পরিমাণ বিটুমিন দরকার সে পরিমাণ মজুদ নেই।  যা আছে তাও নিম্নমাণের।
চসিকের ভারপ্রাপ্ত সচিব মফিদুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক স্বাগত বক্তব্য রাখেন।  সভায় বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, শহিদুল আলম, জহরলাল হাজারী, প্রফেসর নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, মো. সলিমুল্লাহ, গাজী মো. শফিউল আজিম, গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের, শৈবাল দাশ সুমন, মো. নুরুল আমিন, মো. সাহেদ ইকবাল বাবু, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. কাজী নুরুল আমিন, মো. হারুনুর রশিদ, নুরুল হক, হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর, মো. আরশেদুল আলম, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, মো. মোবারক আলী, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, মো. মোর্শেদ আলম, আবদুল সবুর লিটন, গিয়াস উদ্দিন, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, নাজমুল হক ডিউক, মো. ইসমাইল, আফরোজা কালাম, নীলু নাগ, জিয়াউল হক সুমন, আঞ্জুমান আরা, রুমকী সেনগুপ্ত, আতাউল্লাহ চৌধুরী, মো. মোরশেদ আলী, মো. এসারুল হক, মো. ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী, ছালেহ আহামেদ, নজরুল ইসলাম বাহাদুর, শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারেক।
এতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফজলুল্লাহ, চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাসেম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জয়নাল আবেদিন, অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোর্শেদসহ বিভিন্ন সরকারি ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চসিকের পঞ্চম নির্বাচিত পরিষদের কাউন্সিলর মাজহারুল হক চৌধুরী, তারেক সোলায়মান সেলিমসহ করোনাকালে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন ও মুনাজাত করা হয়।  সভার শুরুতে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন চসিক মাদ্রাসা পরিদর্শক মাওলানা হারুনুর রশিদ চৌধুরী।

ডিসি/এসআইকে/এমএনইউ