মুশতাক আহমেদের মৃত্যু অনভিপ্রেত : তথ্যমন্ত্রী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
কারাগারে মৃত্যুবরণ করা লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।  শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রামে নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুশতাক আহমেদের মৃত্যুটা সত্যিই অনভিপ্রেত। আমিও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি, সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের কোন গাফেলতি ছিল কি না- সেটা খুঁজে দেখা যেতে পারে।  তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার যাতে না হয় সেটির জন্য আমরা সচেতন আছি, বিশেষত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাতে এই আইনের অপব্যবহার না হয়, সেজন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় সচেতন আছি এবং কোনোখানে এ ধরণের ঘটনা ঘটলে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়’।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সব মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য।  ডিজিটাল বিষয়টা আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে ছিল না, সুতরাং ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল না।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে যখন একজন সাংবাদিকের চরিত্র হনন করা হয়, একজন গৃহিণীকে যখন অপবাদ দেয়া হয়, একজন সাধারণ মানুষ যখন ডিজিটাল আক্রমণের শিকার হন, তিনি কোন আইনে প্রতিকার পাবেন, তখন কোন আইনের বলে সে নিরাপত্তা পাবে, সেজন্য একটা আইনের দরকার।  এজন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ’র বক্ত্যব্যের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহতো নানা কথা বলেন, যেমন করোনার টিকার বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার ছিলেন, আবার নিজে করোনার টিকা নিয়ে বলেছেন এই টিকা সবার নেয়া উচিত।  আজকে জাফরুল্লাহ সাহেব যে কথা বলেছেন দুদিন পর দেখবেন নিজের কথারই তিনি আবার অন্য সুরে কথা বলবেন।  এটার উত্তর দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না’।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদ গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন।  বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।  তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেয়া হয়।  পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।  সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার করবেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।  জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি ঘুম থেকে দুপুর ১২টার আগে উঠেন না, অথচ সেদিন খালেদা জিয়া বিডিআর হত্যাকাণ্ডের আগে খুব সকালে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন কেন?  সেদিন তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে ৩০-৪০ বার ফোনে কথা বলেছেন, এটার পেছনে রহস্যটা কি ?’
তিনি বলেন, ‘তখন সদ্য সরকার গঠন করেছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আমাদের সরকারের তখনো দুইমাস পূর্তি হয়নি, প্রায় দেড় মাসের মাথায় এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল।  এই হত্যাকাণ্ড সংগঠনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে অস্থিতিশীল করা’।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে, দেশের ইতিহাসে নয় শুধু পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নিরিখেও এতবড় একটি হত্যাকাণ্ডের এতগুলো আসামির বিচার কম হয়েছে।  আমাদের দেশের ইতিহাসে এতজন আসামির বিচার আর হয়নি।  বিশ্ব প্রেক্ষাপটেও এতগুলো আসামির বিচার কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই’।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রার্থীর মামলার বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে মামলা যে কেউ করতে পারেন, মামলা করার অধিকার সবারই আছে, তবে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে বিএনপিকে’।  তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডা. শাহাদাতকে আমি অনুরোধ জানাবো তার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্ন রাখার জন্য, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুস্থ সবল থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ চট্টগ্রামে আসলেন না কেন।  এমনকি চট্টগ্রামে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতা আছেন তারাও কিন্তু নির্বাচনের সময় তার পক্ষে নামেননি।  আমীর খসরু মাহমুদকে দুয়েকবার দেখা গেলেও তা প্রেস কনফারেন্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ।  তার দলের স্থানীয় নেতারাও প্রথমে কিছুটা সরব থাকলেও পরবর্তীতে তারা ঘরের মধ্যে চলে যান।  এজন্য ডা. শাহাদাতকে বলবো এই প্রশ্নগুলো তার দলের নেতাদের কাছে করে তাদের বিরুদ্ধেও যাতে একটা মামলা করেন’।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর