চট্টগ্রামে রেফারি অ্যসো’তে জুয়ার আসর : রেফারি মিরণের ‘সম্পৃক্ততা’ পেলো তদন্ত কমিটি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনে জুয়ার আসর পরিচালনায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ফিফা রেফারি আব্দুল হান্নান মিরণের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
কমিটি মিরণকে স্টেডিয়াম এলাকায় আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা, রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যপদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ পাঁচটি সুপারিশ করেছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে মিরণের কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।  তবে জুয়ার আসর পুলিশ ভেঙে দেওয়ার পর তিনি এতে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছিলেন।
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের দক্ষিণ গ্যালারিতে অবস্থিত চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে গত ১ জুন রাতে অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে গ্রেফতার ও পৌনে ৭ লাখ টাকা জব্দ করে পুলিশ।
অভিযানের পর পুলিশ জানায়, ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনে আলাদা একটি কক্ষকে তারা ফুটবল ট্রেনিং একোডেমি হিসেবে ব্যবহার করছে।  সে কক্ষটিতে আলাদা সিঁড়ি লাগিয়ে দোতালা করা হয়।  সেখানে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসে।
এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয় সিলগালা করে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।  সেই কমিটি সাত দিনের মাথায় বুধবার (৯ জুন) সিজেকেএস সাধরণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত কমিটি মিরণ ছাড়াও রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন ও নির্বাহী সদস্য বিশ্বজিৎ সাহাকে ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সদস্য পদসহ সব পদ থেকে ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সব কার্যক্রম থেকে থেকে তিন বছর বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে কমিটি প্রধান হাফিজুর রহমান বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি।  সে জন্য তারা প্রতিবেদনটি দুটি ভাগে ভাগ করেছেন।  একটি ভাগ রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে তার নজরে আনা হয়েছে।  আরেকটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার জন্য।
কমিটি রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিরণসহ সাত কর্মকর্তার লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করেছে।  পাশাপাশি জুয়ার বোর্ড চালানোর জন্য যেসব ব্যক্তিদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল, তাদের চারজনেরও বক্তব্যও গ্রহণ করেছে।
সিজেকেএস সহ-সভাপতি হাফিজ বলেন, “রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনে জুয়ার আসর বসার বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।  আব্দুল হান্নান মিরণ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সীমান্ত সেন নামে এক ব্যক্তির সাথে ৩০০ টাকার স্ট্যাস্পে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।  যেখানে নির্বাহী সদস্য বিশ্বজিৎ সাহা ও অনুপম বড়ুয়া অপু নামে সাবেক এক ফুটবল খেলোয়াড় সাক্ষি হিসেবে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন”।
রেফারি আব্দুল হান্নান মিরণ।  রেফারি আব্দুল হান্নান মিরণ।  তদন্ত কমিটি সীমান্ত সেনের সঙ্গে মিরণের করা চুক্তি অনুযায়ী দেড় বছরে আয় করা ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা মিরণের কাছ থেকে আদায় করে অ্যাসোসিয়েশনের তহবিলে জমা করারও সুপারিশ করেছে।
এছাড়াও পরবর্তীতে কত টাকা আয় করেছে, তা মিরণের কাছ থেকে হিসাব নেওয়ারও সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
এদিকে মিরণ, ফরহাদ, বিশ্বজিতের মতো জুয়ার বোর্ড পরিচালনাকারী সীমান্ত সেন, তার ভাই কৃষ্ণ কমল সেন ও বিপুল বৈদ্যকে ১০ বছরের জন্য স্টেডিয়াম এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করারও সুপারিশ করেছে।
তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ছয়টি পর্যবেক্ষণও দিয়েছে।  পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনসহ স্টেডিয়াম এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় লোকজনের আনাগোনায় নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, অফিস কার্যক্রম পরিচালনার সময় নির্ধারণ করে তদারকির আওতায় নিয়ে আসা যায়।
সিজেকেএস’র বিভিন্ন ক্রীড়া উপ-কমিটি তাদের স্ব-স্ব ইভেণ্টের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।  তাছাড়া অন্যরা নয়।
ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের কোনো সাধারণ সদস্য, নির্বাহী এবং আজীবন সদস্য সিজেকেএস-সিডিএফএ এর সাথে সম্পৃক্ত কোন ক্লাবের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পর্যবেক্ষণও তারা দিয়েছে।
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের দক্ষিণ গ্যালারিতে দুটি কক্ষ নিয়ে ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়।  রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামে ফুটবল ট্রেইনিং একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে ক্ষুদে ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।  কার্যালয়ের একটি কক্ষকে ফুটবল ট্রেইনিং একাডেমির অস্থায়ী কার্যালয় বলা হলেও মূলত সেখানে রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।  সেখানেই জুয়ার আসর পায় পুলিশ।
পুলিশের অভিযানের পর মিরণ বলেছিলেন, “পাশের কক্ষটি আমরা ফুটবল ট্রেনিং একাডেমিকে দিয়েছি।  সেখানে কী হয়েছে, সেটা আমরা খতিয়ে দেখব”।
তাস খেলার জন্য অফিস পিয়নের উপর দায় চাপিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের পিয়ন তার কয়েকজন বন্ধুকে জায়গা দিয়েছিল।  তারাই হয়ত তাস খেলেছে”।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর