চট্টগ্রামে আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
আওয়ামী লীগের প্রয়াত কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এই উপলক্ষে আয়োজন করা হয় স্মরণ সভার। শনিবার (৯ অক্টোবর) সকালে নগরের এস এস খালেদ রোডের রীমা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিসহ অনেকেই
মাহবুবুল উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মধ্যে ‘শিক্ষার আলো নেই’। টেলিভিশন খুললেই প্রতিদিন পাবেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রতিদিনই লাগাতার মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। উনার জন্য কষ্ট হয়, দুঃখ হয়। উনি একজন শিক্ষিত মানুষ। তার মধ্যে শিক্ষার আলো আছে। যাদের মধ্যে শিক্ষার আলো নেই তারা মিথ্যাচার করতে পারে। যেমন- বেগম খালেদা জিয়া।
হানিফ বলেন, তার লেখাপড়া সম্পর্কে আপনারা জানেন। উনি ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন বলে কোনো রেকর্ড নেই। শিক্ষার আলো নেই বলেই ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করেন। শিক্ষার আলো থাকলে এরকম জঘন্য কাজ কেউ করতে পারতেন না। ১৫ আগস্ট উনার জন্মদিন ছিল না। স্কুল সার্টিফিকেটে তার জন্ম তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর। পাসপোর্টে ৫ সেপ্টেম্বর। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সেখানে ১১ সেপ্টেম্বর। কোনো রেকর্ডে বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম ১৫ অগাস্ট সেটা ছিল না। হঠাৎ করে ১৯৯৩ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী। ঘোষণা দিয়ে ১৫ আগস্টে জন্মদিন পালন করেন। জাতীয় শোক দিবসকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করার জন্য মিথ্যা জন্মদিনে কেক কেটে উল্লাস করেন। শিক্ষার আলো নেই বলে এ কাজ করেছেন। তার পুত্র তারেক রহমান, তার মধ্যেও শিক্ষার আলো নেই।
বিএনপির নাশকতার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার মতো জঘন্য কাজ করেছে। এ কাজটা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে পেট্রোল দিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরে পৈশাচিক উল্লাস করেছে। প্রায় সাড়ে তিনশরও বেশি মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। শিক্ষার আলো যদি থাকত, তাহলে এই নিষ্ঠুর পৈশাচিক ঘটনা করতে পারত না। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মধ্যে শিক্ষার আলো নেই বলেই এসব কাণ্ড করেছে। আজকে তাদের সন্ত্রাসের কাছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা অসহায়। তারা জিম্মি হয়ে গেছে”।
হানিফ বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে, মির্জা ফখরুল পেট্রোল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দিতে পারেন। তারপরও তারা বাধ্য হয়েছেন করতে। কারণ তাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করলে দলে থাকার সুযোগ নেই। মির্জা ফখরুল আপনি সত্য বলার অভ্যাস করুন। মিথ্যার তাবেদারি করবেন না। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের কথা স্বীকার করুন। এই সরকারের নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতি হয়েছে। এরমধ্যে লজ্জার কিছু নেই”।
বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়েই রয়ে যাবে মন্তব্য করে হানিফ বলেন, “আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সামর্থ্য আপনাদের নেই। কারণ জনগণ আপনাদের পাশে নেই। জনগণ আপনাদের চায় না। নেত্রী বলেছিলেন, বিএনপিকে কেন জনগণ ভোট দিবে? পরদিন তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের থেকে বাঁচার জন্য ভোট দিবে। মির্জা ফখরুল সাহেব আপনারা বলতে পারেননি যে, আপনারা এই ভালো কাজ করেছেন অতীতে বা ভবিষ্যতে করবেন। সেটার জন্য ভোট দিবে। কারণ আপনাদের কোনো ভালো কাজ নেই”।
এসময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার সময় বিএনপি হাওয়া ভবন বানিয়ে ‘লুটপাট’ ও ‘সন্ত্রাস’ করেছেন দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সে কারণে জনগণ আপনাদের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে দিয়েছে”।
সভায় উপস্থিত আতাউর রহমানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, “বাবু ভাই, মান্নান ভাই, মহিউদ্দিন ভাই নেই। শুধু আমি আছি। সেসব দিনে আর আমি ফিরতে পারব না। কখনও কোনো আন্দোলনেই তারা পিছপা হননি”।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, “নেতা হলে অনেকে আজ কর্মীদের ভুলে যাই। সুন্দরী বালিকা আসলে দাঁত কেলিয়ে সেলফি তুলি অথচ কর্মীকে সালাম পর্যন্ত দিই না। এই বিপর্যয় কায়সার ভাইকে কখনও স্পর্শ করেনি। তিনি জিয়া কিংবা এরশাদের মন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বেঈমানি করেননি”।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “উচ্চ রাজনৈতিক দর্শন ছিল আতাউর রহমান খান কায়সারের। ওয়ান ইলেভেনের সময় সব ওলট-পালট। কাউকে ফোন দিলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত। যেদিন তিনি নেত্রীর পক্ষে অবস্থানের ঘোষণা দেন সেদিন ভরসা ,পাই কেউ না কেউ আছেন। তিনি দেশের সবচেয়ে ধনী লোক হতে পারতেন। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের জন্য কিছু করেননি”।
নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার আয়োজনে দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম, নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাংসদ ওয়াসিকা আয়েশা খান, নগরের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রমুখ।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর