পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
সাম্প্রদায়িক হামলা, সহিংসতা, পুরোহিত হত্যা, লুটপাট, মন্দির ধ্বংসের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম আবদুল মোমেনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সনাতনী সংগঠন। অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় এসব সংগঠন।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) বিকেল ৪ টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসকন বিভাগীয় সম্পাদক শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
তিনি বলেন, গত ১৩, ১৪, ১৫ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন স্থানে দুষ্কৃতকারীরা মন্দির, হিন্দুদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে নির্মম ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। প্রশাসনের সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তায় ১৯৭১ সালের চেয়েও ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দেশের বিভিন্ন স্থানে। ঘটনার পরপর আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকটি মন্দির পরিদর্শন করেন এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শত শত সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। সুরতহাল রিপোর্টে নিহতদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের কথা উল্লেখ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একদিকে যখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মাঠ পর্যায়ের পুলিশ প্রশাসন ঘটনায় প্রকৃত অভিযুক্তদের খুজে বের করে অপরাধীদের গ্রেফতার করছে, তখন অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি সহিংসতাকারী ও অপরাধীদের উৎসাহি করছে। যেখানে সারাবিশ্বের অসাম্প্রদায়িক প্রতিটি জাতি-গোষ্ঠীর লোক এ ঘটনার নিন্দা করছে, সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা স্বীকারই করলেন না। সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে নির্যাতিত সহিংসতার শিকার সনাতনী জাতি-গোষ্ঠী এ রকম বক্তব্য প্রত্যাশা করেনি।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনায় সহিংসতার শিকার ব্যক্তিও জীবন উৎসর্গকারী আত্মার সঙ্গে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ তামাশা করেছেন। সমবেদনার পরিবর্তে তিনি কাটাঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি একটি বিশেষ ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমরা অত্যন্ত শঙ্কিত এবং নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছি। তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছে। আমরা ওনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এসময় সংগঠনের নেতারা চার দফা দাবি তুলে করেন। এগুলো হলো-
১. সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মঠ-মন্দির, আশ্রম, দেবালয়সমূহকে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পুনর্নির্মাণ এবং অগ্নিদগ্ধ ও লুটপাটকৃত বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণ করে দিতে হবে।
৩. পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কল্পনাপ্রসূত ও বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহারপূর্বক নিহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
৪. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ, ইসকন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর