চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ইন্দিরা গান্ধীর ১০৫ তম জন্মদিন উদযাপন

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
মহান স্বধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহায়তাকারী ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধীর ১০৫তম জন্মদিন বর্ণাঢ্যভাবে পালন করেছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় এতে প্রধান আলোচক ছিলেন ভারতের সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, চট্টগ্রমে প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, বিএফইউজের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী।
সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ৭১ সালে পাকিস্তানী শক্তিশালী সেনা বাহিনী নিরস্ত্র সাধারণ বাঙালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ভীতু বাঙালী বলতেন। সেই ভীতু বাঙালী বঙ্গবন্ধুর আহবানে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৭১ এ আমাদের অস্ত্র ছিল না, কিন্তু ছিল অটুট মনোবল । মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধুর যোগ্য নেতৃত্বকে শানিত করেছেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বাঙালীর পরম বন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। তিনি যদি ১ কোটির বেশী বাঙালীকে আশ্রয় না দিতেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ না দিতেন, প্রবাসী সরকার গঠনের সুযোগ করে না দিতেন, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আরো অনেক বেশি রক্ত প্রবাহিত হতো। শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা নয় স্বাধীনতার পর পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। তা না হলে আমরা হয়তো আমাদের এই মহান নেতাকে ফিরে পেতাম না। প্রকৃত বন্ধুত্বের প্রমাণ হয় সুখে দুঃখে রাজার আলয়ে। ভারত আমাদের চুক্তিকৃত বন্ধুনয়, দূর্দিনে বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়ে চির আপন হয়েছেন।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে অনিন্দ্য ব্যানার্জী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। তারা শুরু করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। কোটি মানুষ প্রাণের ভয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নেয়। তখন ইন্দিরা সরকার তাদের খাদ্য ও জীবনের নিরাপত্তা দেয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরের আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকার তখন পাকিস্তানি বাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণে সরকার পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়লে এগিয়ে আসেন ইন্দিরা গান্ধী। তিনি ভারতের কলকাতায় অবস্থান করে অস্থায়ীভাবে সরকার পরিচালনার সব ব্যবস্থা করে দেন। কলকাতা অবস্থান করেই প্রবাসী সরকার পৃথিবীব্যাপী স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। শুধু তাই নয়; স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র গঠন করে বিশ্বের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি সংবাদ গান আবৃত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার ব্যবস্থা করেন শ্রীমতি গান্ধী। এই সময় দিল্লীতে দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব বাংলাদেশের আয়োজনের ব্যবস্থা করেন তিনি। এই সম্মেলনে ৮০ দেশের ৭০০ জনপ্রতিনিধি অংশ নেয়। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ব জনমত গঠন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে বিভিন্ন দেশে চিঠি প্রেরণ করেন। তিনি ৭১ এ পূর্ববঙ্গ থেকে আশ্রয় নেয়া সকল বাঙালিদের ভারতে আশ্রয় দিয়ে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
সহকারী হাই কমিশনার বলেন, ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বরে সব সমস্যা মোকাবেলা করে তিনিই স্বীকৃতি দেন বাংলাদেশকে। এই মহিয়সি নারীর জন্মদিন পালন করায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের কর্মকর্তা ও সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

ডিসি/এসআইকে/আরসি