চট্টগ্রামে দেড় লাখ ভবন মারাত্মক ঝুঁকিতে

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম নগরের ১ লাখ ৮৩ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবন ভূমিকম্পের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি) এর উপাচার্য প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
রবিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি কনফারেন্স হলে গবেষণা সেল কর্তৃক আয়োজিত ভূমিকম্প সচেতনতা সৃষ্টি ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে সেগুলোর শক্তি বৃদ্ধিতে সরকার জিরো ইন্টারেস্টে লোন দিতে পারে। তাহলে খুব দ্রুত তারা ভবনগুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে পারবে।
নগরের সাড়ে ৭শ’ স্কুল ঝুঁকিতে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরের এক হাজার ৩৩টি স্কুলের মধ্যে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে ৭৪০টি। এছাড়া অনেক স্কুল টেকসই নয়। এসব স্কুলকে টেকসই করতে শিগগিরই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্কুল-কলেজের টেবিলগুলো টেকসই করতে হবে, যেন ভূমিকম্পে সেগুলোকে কাজে লাগানো যায়। শিক্ষার্থীরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। আমরা এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টেবিলগুলো কেমন হবে, তার একটি বর্ণনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো স্কুলে সেটির প্রতিফলন দেখতে পাইনি।
তিনি বলেন, অনেক ভবনের নিচতলার পিলার ভেঙে সমান করে প্রাইভেট বা ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুল তৈরি হচ্ছে। যেগুলো ভূমিকম্পে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এখন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। শিক্ষক-অভিভাবকরা সচেতন হলে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরের বাকলিয়া এলাকার রাস্তাগুলো অনেক ছোট। ভূমিকম্পে কোন ভবন হেলে পড়লে সেখানে অ্যাম্বুলেন্স যেতে পারবে না। নগরের প্রত্যেকটা দফতরকে একযোগে কাজ করতে হবে। যেমন: বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলে সেখানে সিল মেরে দিবে। আপনার ভবন ভূমিকম্পে ঝুঁকিমুক্ত তো? একইভাবে পানি আর গ্যাস বিল দিতে গেলেও সেখানে এভাবে সিল মেরে দিবে। একদিন সে সচেতন না হোক পরের দিন তো হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে আরো সতর্ক হতে হবে। কোনো ভবন অনুমোদন দিয়েই দায় সারলে হবে না। ভবনটির কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তদারকি করতে হবে। এখন ৫ তলা ভবন অনুমোদন নিয়ে ৮ তলা ভবন নির্মাণ করে। সেদিকে আর কোনো খবর থাকে না। ভূমিকম্প হলে সেগুলো মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে। এছাড়াও বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সড়কের পাহাড়গুলো সোজা কাটা হয়েছে। সেগুলোতে স্লোব তৈরি করে দিতে হবে। না হয় সেগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে।
গ্রামের বাড়িগুলো তৈরিতেও সতর্ক থাকতে হবে জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাটির দেওয়াল নির্মাণের সময় দুইপাশে বাঁশ দিতে হবে। দেওয়ালের মাঝখানে বাঁশ দিতে হবে। যেন ভূমিকম্পে দেওয়াল ধসে পড়লেও টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এতে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি কমবে। তবে, আগের বিল্ডিংয়ের চেয়ে নতুন যে বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে সেগুলো ঝুঁকিতে। কারণ এখন সবকিছুতে ভেজাল। কম দিয়ে অধিক লাভ করতে চায়। আগের মানুষগুলো তো এসব চিন্তা করতো না। তারা ভালো জিনিস দিয়েই ভবন নির্মাণ করতো।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর