৮ ঘণ্টার বেশি ট্রেন চালাবেন না চালকরা, সূচী বিপর্যয়ের শঙ্কা

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের বিতর্কিত দু’টি ধারা বাতিল করে রেলওয়েতে প্রচলিত মাইলেজ সুবিধা বহাল রাখা না হলে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করেছেন রানিং স্টাফরা।  এতে ঘোষণা করা হয়েছে, মাইলেজ জটিলতা নিরসন না হলে আগামি ২৫ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি ট্রেন চালাবেন না লোকোমাস্টাররা।  এতে সারা দেশে চলাচলরত যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোর পাশাপাশি পার্সেল ট্রেনে চরম শিডিউল (সূচি) বির্পযয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রবিবার (২৩ জানুয়ারি) সিআরবিতে হিসাব শাখার অফিস ঘেরাও শেষে এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।  এছাড়া ৩১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির প্রস্তুতির জন্য ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
এরমধ্যে ২৪ জানুয়ারি বেলা ১১ টায় পাহাড়তলীর ডি আর এম চত্বরে মিছিল, ২৫ জানুয়ারি সকাল ১০ টায় রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভাগীয় কমিটির সভা, ২৬ জানুয়ারি বিকাল ৪ টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বিক্ষোভ মিছিল, ২৭ জানুয়ারি পাহাড়তলী লোকোশেড থেকে ডি আর এম অফিস পর্যন্ত মিছিল শেষে বিভাগীয় কমিটির সভা। তাছাড়া ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেলস্টেশন, পাহাড়তলী লোকোশেড, লাকসাম লোকোশেড ও সিজিপিওয়াই লোকোশেডে সমাবেশ-মিছিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান সিআরবি ঘেরাও কর্মসূচিতে বলেন, ‘যে চাকরি করে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বেতন নিতে হয়, সে চাকরি আমরা করব না।  রিকোয়েস্ট পাঠানোর দরকার নেই।  আপনি বসে থাকেন, এক ঘণ্টা যদি রেলগাড়ি না চলে তাহলে আপনার চেয়ার থাকবে না’।
দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম।  তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু রাখতে পারেননি।  আমরা সচিবের কাছে গিয়েছি, তিনিও আশ্বাস দিয়ে রাখতে পারেননি, ডিজিও আশ্বাস রাখলেন না।  আমরা বাধ্য হয়েছি এ কর্মসূচি দিতে’।  তিনি জানান, সারা দেশে আগামি ২৫ জানুয়ারি থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি ট্রেন না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  মানে যে নিয়মে বেতন পরিশোধ করছে, সে নিয়মেই ট্রেন চালাবেন লোকোমাস্টাররা।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যাত্রী ভোগান্তি সৃষ্টি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, কিন্তু সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বাধ্য হয়ে এসব কর্মসূচি দিচ্ছি আমরা’।
এর আগে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) পাহাড়তলী লোকোশেডে এক জরুরি সভা শেষে সংগঠনটির পক্ষ থেকে হঠাৎ ঘোষণা আসে চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) থেকেই বন্ধ থাকবে ট্রেন চলাচল।  পরে নানা নাটকীয়তায় ওইদিন সঠিক সময়ে ট্রেন পরিচালনা করা হয়।  তবে ঘোষণা দেওয়া হয় দাবি আদায় না হলে আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে কর্মবিরতি।  এবার ২৩ জানুয়ারির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ২৫ জানুয়ারি থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি ট্রেন চালাবেন না রানিং স্টাফরা।
প্রসঙ্গত, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছেন ট্রেনচালক, গার্ড ও টিকিট চেকাররা।  বর্তমানে ট্রেন চলাচল নিরবচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক রাখতে এসব রানিং স্টাফকে দৈনিক নির্ধারিত ১২ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে।  সেই হিসেবে ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি না করার ঘোষণায় চরম শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর