সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে : শিক্ষা উপমন্ত্রী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কাম্য যোগ্যতা অর্জন করেছে কি না, তাদের মধ্যে কর্মজগতে প্রবেশের দক্ষতাগুলো সৃষ্টি হয়েছে কি না- তা একাডেমিকও হতে পারে, নন-একাডেমিকও হতে পারে- দেখাটা দরকার। সুতরাং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক বা বৈশ্বিক মানদণ্ড যদি বজায় না রাখে, তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণামূলকই হবে। শিক্ষার্থীদের আমরা বলছি, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসো, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করো, কিন্তু মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের আমরা সেই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা ও দক্ষতা দিতে পারছি না। তারা কর্মজগতে প্রবেশ করে দেখতে পাচ্ছে সেই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবে তারা অনুপযুক্ত। এ কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু মানহীন শিক্ষাদান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল, সুতরাং সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির দামপাড়ার কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের উদ্যোগে ‘উচ্চশিক্ষায় অ্যাক্রেডিটেশন বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী।
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলকে বাংলাদেশের একটি যুগান্তকারী অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। অ্যাক্রেডিটেশন ছাড়া শিক্ষার্থীরা চাকরি পাবে না। অ্যাক্রেডিটেশন বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী প্রসেস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছেন। বর্তমানে আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী এখন উচ্চশিক্ষা খাতে আসছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে উচ্চশিক্ষায় যাওয়া আমাদের এই অঞ্চলের সামাজিক বৈশিষ্ট্য’।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কাম্য যোগ্যতা অর্জন করেছে কি না, তাদের মধ্যে কর্মজগতে প্রবেশের দক্ষতাগুলো সৃষ্টি হয়েছে কি না- তা একাডেমিকও হতে পারে, নন-একাডেমিকও হতে পারে- দেখাটা দরকার। সুতরাং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক বা বৈশ্বিক মানদণ্ড যদি বজায় না রাখে, তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণামূলকই হবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমরা বলছি, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসো, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করো, কিন্তু মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের আমরা সেই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা ও দক্ষতা দিতে পারছি না। তারা কর্মজগতে প্রবেশ করে দেখতে পাচ্ছে সেই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবে তারা অনুপযুক্ত। এ কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সৃষ্টি হয়েছে’।
শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেহেতু মানহীন শিক্ষাদান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল, সুতরাং সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’ বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলকে বাংলাদেশের একটি যুগান্তকারী অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। অ্যাক্রেডিটেশন ছাড়া শিক্ষার্থীরা চাকরি পাবে না’।
চাকরিদাতাদের চাহিদা অনুসারে যুগোপযোগী কারিক্যুলাম প্রণয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার জন্য বিএসিকে পদক্ষেপ নিতে বলেন তিনি। এ ছাড়া শুধু উচ্চতর ডিগ্রিগুলোই নয়, ডিপ্লোমা ডিগ্রিকেও অ্যাক্রেডিটেশনের আওতায় আনার জন্য তিনি বিএসিকে আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, ‘একটি দেশ ও একটি জাতি এগিয়ে যায় শিক্ষার ভিত্তিতে। বর্তমান বিশ্বের অগ্রগতির ভিত্তি হলো শিক্ষা। এই শিক্ষার দুটি দিক রয়েছে; একটি হলো প্রাইমারি, যা শৈশব থেকে সেকেন্ডারি পর্যন্ত; অপরটি হলো উচ্চশিক্ষা। আমি মনে করি, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জোর দিতে হলে ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট-এর ১৯৯৬ সালের একটি রিপোর্ট স্মরণযোগ্য। এই রিপোর্টে লেখা হয়েছে, শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হলে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লেভেলে জোর দিতে হবে। অর্থাৎ লিটারেসি (ভাষা) ও নিউমারেসির (গণিত) ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নিউমারেসির ওপর জোর দিলে যে অগ্রগতি হয়, তার ওপর ভিত্তি করে একটি দেশের প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান এগিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চশিক্ষার গুণগত মান উন্নত করার ক্ষেত্রে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অ্যাক্রিডেট করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই জরুরি’।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তা ছিলেন আইকিউএসি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির পরিচালক অধ্যাপক ড. তৌফিক সাঈদ।
কাউন্সিলের পূর্ণকালীন সদস্য অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী এবং অধ্যাপক ড. এস এম কবীর কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ডিন, আইকিউএসির পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকরা, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা ও বিভাগীয় প্রধানরা অংশ নেন।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালকসহ ১২টি সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষরা কর্মশালায় অংশ নেন। কর্মশালাটির আয়োজনে সহযোগিতা প্রদান করেছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেল।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর