তরুণরা কিভাবে চট্টগ্রামের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে কাজ করবো : শিক্ষামন্ত্রী

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণরা কিভাবে চট্টগ্রামের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে, তরুণদের কিভাবে কর্মসংস্থান হবে সে বিষয়টি নিয়ে আমাদের বিশেষভাবে কাজ করতে বলেছেন। সে লক্ষ্যেই কাজ করবো।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে অনেক অবকাঠামো তিনি করে দিয়েছেন। সুদূর টেকনাফ থেকে ফেনী পর্যন্ত নানান ধরনের আন্তর্জাতিক মানের উন্নয়ন এখানে হয়েছে। যে প্রতিশ্রুতি সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করবো।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি আরো বলেন, ক্ষমতার দম্ভ, অহংকার, ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমি বিশ্বাসী নই। এখানে যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আছেন, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের যে নেতৃত্ব আছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ‘ইকনোমিক ইকো সিস্টেম’ তৈরি করতে এবং অর্থনীতির সঙ্গে শিক্ষার একটা সম্পর্ক সেটা যাতে আমরা সৃষ্টি করতে পারি সে বিষয়ে কাজ করবো। সেইসঙ্গে জলাবদ্ধতা প্রকল্পসহ চট্টগ্রামে যে প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রয়েছে সেগুলো দ্রুত সময়ে শেষ করা। চট্টগ্রামের মেয়র মহোদয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কাজগুলো সমন্বয় করে দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেছেন, ভালো কিছু করার লক্ষ্যে সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবে।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভিন্ন ধরণের সমালোচনা, অপপ্রচার ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার করণীয় জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জটা একটু কমপ্লেক্স। সরকারে থাকলে চ্যালেঞ্জ একটু কমপ্লেক্স হয়। আর হ্যাঁ, কিছু সমালোচনা হবে। সেই সমালোচনা নেওয়ার সক্ষমতা রাজনীতিবিদদের থাকতে হবে। সক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা সেটা পারব। আমাদেরকে যে সিদ্ধান্তগুলো শিক্ষাবিদদের সাথে, বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে নেয়া হয়েছেৃ, শুধুমাত্র সমালোচিত হব এই ভয়ে যে সিদ্ধান্ত যথার্থ এবং সঠিক সেটা নিব না, তা হতে দেওয়া যায় না। দৃঢ়ভাবে কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন আমাদের অবশ্যই করতে হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই’।
চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। আগামী শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণি যুক্ত হবে নতুন শিক্ষাক্রমের তালিকায়। নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়া, নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক বিভাজন তুলে দেওয়াসহ একগুচ্ছ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পরীক্ষা ও মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শেখার মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ প্রক্রিয়া হয়েছে আনন্দময়। তবে পরীক্ষা কমানো, বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া, মূল্যায়ন পদ্ধতিসহ শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেকে সমালোচনাও করছেন।
এর আগে নওফেল বলেছিলেন, প্রয়োজনে নতুন শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আসতে পরে।
এবার নওফেল বলেন, ‘একটা চ্যালেঞ্জের বিষয় হচ্ছে আসলে, নেগেটিভ জিনিস ভাইরাল হয় বেশি। এটা একটা। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নিবন্ধিত এবং আইনত স্বীকৃত গণমাধ্যম যেভাবে একটা বিষয় যাচাই-বাছাই অনুসন্ধান করে গণমাধ্যমে দেয়, সেভাবে কিন্তু সাধারণ মানুষ, যারা অপপ্রচার করে তারা বা আমরা যারা ব্যবহারকারী তারাও দিই না। দেখা যায়, নেগেটিভ প্রচারণার প্রতি আমাদের দৃষ্টি বেশি থাকে। নিজেরাও অনেক সময় অজান্তে নেগেটিভ প্রচারণাতে আমরা জড়িয়ে পড়ি। সেটা কাউন্টার করাটা সারা বিশ্বব্যাপী একটা চ্যালেঞ্জ’।
শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নওফেল বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা, ক্ষমতার দম্ভ, অহংকার- এ ধরণের কাজে আমি বিশ্বাস করি না। আমার বাবা চট্টলাবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সাড়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন। আমি দেখেছি কিভাবে তিনি জনসেবা দিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা, আমি যেহেতু শৈশব থেকে দেখে এসেছি সেগুলোর প্রতি তাই আমার কোনো লোভ লালসা নেই’।
এই সরকারকে জনসেবায় কিভাবে আরো বেশি করে কাজে লাগানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করবেন জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘বিশেষ করে তরুণ সমাজকে কিভাবে আরো কর্মমুখী করতে পারি, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো বেশি ইন্ডাস্ট্রির সাথে, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ত করতে পারি সেলক্ষ্যে আমরা কাজ করব’।
চট্টগ্রাম নগরীর বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে নওফেল কি ভাবছেন এমন প্রশ্নে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, চট্টগ্রামকে ঘিরে অনেক উন্নত, আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো তিনি করে দিয়েছেন। সুদূর টেকনাফ থেকে শুরু করে সেই ফেনী পর্যন্ত। নানা ধরণের অবকাঠামো এখানে হয়েছে। এই অঞ্চলকে ঘিরে যে বাণিজ্য হত, অর্থনীতিতে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান, সেসমস্ত জায়গায় তরুণরা কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, তরুণদের কিভাবে কর্মসংস্থান হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি আমাদের বিশেষভাবে কাজ করতে বলেছেন’।
সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করণীয় নির্ধারণ করবেন জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘আমাদের নেতৃবৃন্দ এখানে যারা আছেন। যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ এবং প্রগতিশীল অন্যান্য রাজনৈতিক দলে সমূহের যারা আছেন, তাদের সবার সাথে আলোচনা করে একটা ইকোনমিক ইকো-সিস্টেম আমরা যাতে করতে পারি। এবং ইকোনমির সাথে এডুকেশনের একটা সম্পর্ক, সেটা যাতে আমরা সৃষ্টি করতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের সন্তানরা শুধুমাত্র ভবিষ্যতের আশায় বিদেশে পাড়ি দেবেন এবং বিদেশে যাওয়া ছাড়া যদি তাদের আর কোনো গতি না থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে আমরা যারা চট্টগ্রামে আছি এটা আমাদের ব্যর্থতা। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করব’।
এর আগে বৈঠকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার কৃ‘ পদ রায়সহ স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ