আ’লীগের নোমিনেশন ফরম নিলেন বিএনপির মেয়র

বিশেষ প্রতিনিধি >>>
তিনি নানানভাবেই আলোচিত। আওয়ামী লীগের সমর্থনে ৪ বারের কাউন্সিলর মেয়র নির্বাচন করতে যোগ দেন বিএনপিতে। মেয়রপদে বিএনপির সমর্থনে নির্বাচন করে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারান তিনি। পাঁচ বছর বিএনপি ও দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে পাঁচ বছর নানান কর্মকা- করেন। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি আবারো দাঁড়ান বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হিসেবে। কিন্তু কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, সরকারি দলের ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কেন্দ্রে বিএনপির কর্মীদের থাকতে না পারা, এবং কথিত নিজ দল বিএনপির নেতৃত্বের চাপে বিপুল অর্থ খরচ করে বেলা ১১ টায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে সব রকম রাজনীতি থেকে দূরে থাকার ঘোষণা দেন। প্রায় ১ বছর চুপচাপ থাকলেও পরবর্তীতে আবারও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন, মোস্তফা-হাকিম ফাউন্ডেশনের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়ার মাধ্যমে শুরু করেন রাজনীতি। তিনি হলেন এম মনজুর আলম।
আওয়ামী লীগ থেকে বেড়িয়ে বিএনপি হয়ে আবারো আওয়ামী লীগে মনজুর আলমের প্রবেশের চেষ্টাকে এই অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা নেননি ভালোভাবে। অনেকেই তাঁকে ‘পুঁজিবাদী রাজনীতির উদাহরণযোগ্য চরিত্র’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। অর্থ দিয়ে রাজনীতি করার মানসিকতা এবং রাজনৈতিক স্বপ্ন পূরণে পল্টি মারার তকমা জুড়ে দেয়া হয় তার নামের পাশে। তারপরেও নিজেদের পারিবারিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মোস্তফা-হাকিম ফাউন্ডেশন নিয়ে নানান কর্মকা- অব্যাহত রাখেন। গত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম- ১০ আসনে আওয়ামী লীগের নোমিনেশন পাচ্ছেন- এমন ভরসায় মনোনয়নপত্রও নেন। কিন্তু শেষমেষ তিনি দলটির সমর্থন পাননি।
তবে তিনি যে আবারো মেয়র নির্বাচন করার মানসে তৎপরতা চালাচ্ছেন সেটি প্রায় সবারই জানা। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের চট্টগ্রামের নেতারা তাকে আর আস্থার জায়গায় বসাতে পারছেন না বলে বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন। তবে তিনি টাকার বিনিময়ে অসম্ভবকেও সম্ভব করায় পারদর্শী- এটাও উল্লেখ করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপিও আর তাঁকে নিয়ে রাজনীতি করার পক্ষে নয়। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র নিয়েছেন সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আলমগীর নামের এক ব্যক্তিসহ মোট তিনজন গিয়ে মনজুর আলমের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টা পর্যন্ত গত চার দিনে মেয়র পদে মোট ১৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মনজুর আলমের শুরুটা আওয়ামী লীগের রাজনীতি দিয়ে। টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েই নিজ এলাকা উত্তর কাট্টলী থেকে নির্বাচিত হন কাউন্সিলর। এরপর আদর্শের বিপরীত মেরুতে গিয়ে দলবদল করে ২০১০ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়রও নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা নেয়া শুরু হয়। চলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এসজেপি