রেজাউল-শাহাদাত : কার কত সম্পদ?

সাদিয়া জাহান প্রমি, নগর প্রতিবেদক >>>
দ্রুত এগিয়ে আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচন। আগামি ২৯ মার্চ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরপ্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটির ১৯ লক্ষ ১৭ হাজার ভোটারের ভোট পড়বে কি না, অথবা সরকারি দল বা ক্ষমতার বাইরে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীনদের চাপে থাকা বিএনপিসহ অন্য দলগুলো ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে তেমন আলোচনা না হলেও সবার দৃষ্টি মেয়রপ্রার্থীদের দিকে। এবার মোট ৯ জন প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও আলোচনা শুধুই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়রপ্রার্থীকে নিয়েই। তাই এই দুই নেতার নির্বাচনী খরচ তারা কিভাবে মেটাবেন, কোত্থেকে পাবেন নির্বাচনী খরচ, কার কত সম্পদ- এসব বিষয়েও দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের একটু জানার আগ্রহ থাকে।
নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র থেকে জানা গেছে, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থিক নৌকার প্রার্থী এম রেজাউল করিম মোট ১৯ লাখ টাকা খরচ করবেন পুরো নির্বাচনী সময়ে। নির্বাচনী হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, ভোটের জন্য ১৯ লাখ টাকার মধ্যে নিজের আয় থেকে ১ লাখ টাকা খরচ করবেন তিনি। তাঁর স্ত্রী দেবেন পাঁচ লাখ, ১ ভাই সাড়ে ৩ লাখ এবং অন্য ২ ভাই পাঁচ লাখ টাকা করে দেবেন।

দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ডা. শাহাদাত হোসেন।

অন্যদিকে ৪৮ টি মামলা মাথায় নিয়ে নির্বাচন করতে যাওয়া ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন খরচ করবেন ২০ লাখ টাকা। তিনি দুই বোনের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিবেন পাঁচ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা। আর বাকি ১০ লাখ টাকা নিজের গচ্ছিত টাকা থেকে খরচ করবেন। হলফনামার তথ্য থেকে জানা যায়, বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের মাথায় ঋণের বোঝা রয়েছে। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, দ্রুত বিচার আইনসহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় ৪৮টি মামলা আছে। এর মধ্যে ৪৩টি বিচারাধীন। দু’টি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত এবং তিনটি তদন্তাধীন আছে। তবে এসবগুলোই রাজনৈতিক মামলা বলে তিনি দাবি করেন। বাস্তবিক অর্থে তিনিও চট্টগ্রামে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। ডা. শাহাদাত হলফনামায় উল্লেখ করেন, উত্তরা ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কাছে তার তিন কোটি দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ আছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কাছে ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১৩২ টাকা এবং অন্যান্য খাতে তার আরও দুই লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩ টাকা ঋণ আছে।
ডা. শাহাদাত হোসেন অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন দেখিয়েছেন ৪ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ২২৭ টাকা। নানাখাতে তার মোট বার্ষিক আয় ২০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে আসে তিন লাখ ৫৩ হাজার ২৫ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষকতা ও পরামর্শক হিসেবে পান ১৭ লাখ ২১ হাজার টাকা।
ডা. শাহাদাত অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন চার কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ২২৭ টাকা। এর মধ্যে নিজের নগদ টাকা আছে ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৭ টাকা, নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার বাবদ ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫০ টাকা। এছাড়া নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় শাহাদাতের দি ট্রিটমেন্ট সেন্টার নামে একটি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টার আছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক মূলধন ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ টাকা। তার নিজের নামে ১১ লাখ ৮০ হাজার মূল্যমানের কার (ফিল্ডার-টয়োটা) ও ২৭ লাখ ২০ হাজার মূল্যমানের ভি-৭৩ মডেলের পুরনো জিপ গাড়ি আছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে ডা. শাহাদাতের নিজ নামে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। এর মধ্যে নিজ নামে ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১৮ শতক এবং ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১ দশমিক ৫ কাঠা অকৃষি জমি আছে। নিজ নামে ৬৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার আটতলাবিশিষ্ট একটি দালানের এক অংশ আছে। এ ছাড়া ৩৫ লাখ টাকা দামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে শাহাদাতের।
তবে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যাংক অথবা আর্থিক কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো ঋণ নেই বলে উল্লেখ করা হয়। রেজাউল করিম চৌধুরীর নামে কোনো মামলাও নেই। রেজাউল করিম তার হলফনামায় দাবি করেন, একক বা যৌথভাবে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার কোনো ঋণ নেই। তিনি তার হলফনামায় মোট ৭১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। নিজের ও নির্ভরশীলদের মিলে তার বার্ষিক আয় ৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। বাড়ি, দোকান ভাড়া ও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে রেজাউলের বার্ষিক আয় ৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে নির্ভরশীলদের আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থেকে আয় ২ লাখ ১ হাজার টাকা।

দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এম রেজাউল কমরম চৌধুরী।

হলফনামা অনুসারে, রেজাউল করিম চৌধুরীর মোট অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে আছে নগদ ১ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৪০৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৩৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৯০ টাকা। পোস্টাল, সেভিংসে নিজ নামে না থাকলেও স্ত্রীর নামে ২০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড আছে। রেজাউল করিমের নিজ নামে রয়েছে ৪ লাখ টাকা দামের একটি মোটর গাড়ি। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মধ্যে বিবাহসূত্রে নিজ নামে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের ২০ তোলা স্বর্ণ ও স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৪০ তোলা স্বর্ণ আছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজের নামে কৃষি ও অকৃষি জমি নেই। তাবে তার স্ত্রীর নামে দুই গন্ডা দুই কড়া অকৃষি জমি আছে। দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে নিজ নামে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমির ওপর আবাসিক গৃহমূল্য ১ লাখ টাকা ও যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত চার ভাগের এক অংশ। নিজ নামে চারটি অ্যাপার্টমেন্ট যার মূল্য ১ কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা।

ডিসি/এসআইকে/এসজেপি