‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ উদযাপিত

নগর প্রতিবেদক >>>
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে কর্তব্যরত অবস্থায় বিগত বছরগুলোতে মৃত্যুবরণকারী (নিহত/মৃত) পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক। রবিবার (১ মার্চ) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্স ‘সিভিক সেন্টারে’ আয়োজিত এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. শাহাব উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনকালে নিহত পুলিশ সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দাঁড়িয়ে সম্মান জ্ঞাপন এবং ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর সাথে শাহাদাত বরণকারী পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন রশিদুল হক। তিনি স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ ৩৬ জন পুলিশ সদস্য, তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলার দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে শহীদ ৮১ জন পুলিশ সদস্য এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে মৃত্যুবরণকারী সকল বীর শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনকালে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং তাদের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্র“তি প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পুলিশ পরিবারের সদস্যরা বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনকালে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির প্রতিটি ক্লান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। তাদের এ অবদান কখনো বৃথা যাবে না। তাদের উত্তরসূরী পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিহতদের পরিবারের মঙ্গলে কাজ করে যাবে। তিনি নিহত পুলিশ পরিবারের যেকোনো সদস্যকে প্রয়োজনে দায়িত্বরত ইউনিটে যোগাযোগ করার পরামর্শ প্রদান করেন।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে এ ধরণের একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি অনুষ্ঠানে আগত নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনকালে নিহত পুলিশ সদস্যদের শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে চ্যান্সেলর স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের অকুতোভয় পুলিশ সদস্যদের বীরত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও জাতির প্রয়োজনে পুলিশ সদস্যরা এ ধরণের সাহসী ভূমিকা পালন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নিহত পুলিশ সদস্যরা প্রকৃত অর্থে মৃত নয়। তারা পুলিশ বাহিনীর কাছে অমর। পুলিশ মেমোরিয়াল ডে প্রবর্তন তাদের আত্মাকে অমরত্ব দান করেছে। যতদিন এ বাংলাদেশ থাকবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে যেকোনো প্রয়োজনে থানা, জেলা ও রেঞ্জ প্রধানের শরণাপন্ন হওয়ার অনুরোধ করেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি এ অনুষ্ঠানে ২১ জন নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন।

ডিসি/এসআইকে/সিসি