সাংবাদিক মহররমের উপর হামলা, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের প্রতিবাদ

উপরে হামলার শিকার সাংবাদিক মহররম। নীচে হামলাকারী স্বপন ও নওশাদ।

নগর প্রতিবেদক >>>
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) নির্বাহী সদ্স্য সাংবাদিক মহররম হোসাইনের উপর বাজার সিন্ডিকেটের সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। পণ্যের অতিরিক্তি মূল্য নেয়ার প্রতিবাদ করায় তার উপর হামলা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এই ঘটনায় আহত মহররম হোসাইন বাদি হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ এবং আরো কয়েকজন অজ্ঞাত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেছেন। এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক আসামিরা হচ্ছেন নওশাদ আলী খান (৬৫) ও জুয়েল সাহা (২৭)। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের বকসিরহাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। 
দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র ফটো সাংবাদিক রাজেশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত দোকানদার ও পুলিশের সামনে ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, ‘আমি খাতুনগঞ্জে ছবি তুলতে যাচ্ছি। পথিমধ্যে বকশির হাটে জটলা দেখে থামি। দেখি আমাদের মহররমকে ২-৩ জন মিলে পেটাচ্ছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই উল্টাপাল্টা বকতে থাকে দোকানদার। আমি তার পরিচয় দিলে থামে। মহররম বলল, জিনিসের দাম বেশি নেয়ার প্রতিবাদ করায় দোকানদার চাঁদাবাজসহ আজেবাজে কথা বলে মারতে থাকে। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর দোকানদার ও তার সঙ্গের মাস্তান টাইপের ওরা বলে সাংবাদিক নাকি তাদের পকেটে থাকে’।
হামলার শিকার মহরম হোসাইন জানান, তিনি মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে মসলা কিনতে বক্সিরহাটের দয়াল পাশারি ভান্ডারে যান। এ সময় আরেক ক্রেতা সেখানে মসলা কিনতে আসেন। দোকানের মালিক মসলার অতিরিক্ত মূল্য দাবি করলে ওই ক্রেতাসহ তিনিও প্রতিবাদ করেন। এ সময় দোকানের মালিক স্বপন কুমার সাহাসহ অন্যরা তাকে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তাদের পরিচিত আরো কয়েকজন আমার উপর হামলা চালিয়ে এলোপাতারি মারধর করেন। 

দুই হামলাকারী স্বপন ও নওশাদ।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) এর যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী জানান, দুপুর একটার কাছাকাছি সহকর্মী যুগান্তরের সিনিয়র ফটোসাংবাদিক রাজেশের ফোন পাই। জানতে পারি পণ্যের অতিরিক্ত দাম রাখার প্রতিবাদ করায় আমাদের সাংবাদিক সহকর্মী মো. মহররম হোসেনকে কয়েকজন ব্যক্তি মিলে পেটাচ্ছে। আমি আর দেরি না করে আমার আরো কয়েকজন সহকর্মীকে ফোন দিয়েই আমি ঘটনাস্থলে গেলাম। আমাকে দেখেই আহত মহররম কেঁদে ফেললেন। ততক্ষণে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলামও উপস্থিত হন। আমরা মহররমকে নিয়ে থানায় মামলা করি। আমরা এই ঘটনায় যুক্ত হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
মহসিন কাজী জানান, পরে পুলিশ এবং বিপুল সংখ্যক মানুষের সামনে দোষ স্বীকার করে দোকানদার স্বপন কুমার সাহা। দয়াল পাশারি ভাণ্ডার নামের দোকানের মালিক স্বপন বারবার মাফ চাইতে উদ্যত। পায়ে পড়ার চেষ্টা করে। দোকানদার স্বপন বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। তার মুখ থেকে বিস্তারিত শুনে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দোকানদার স্বপনকে আটক করে। এছাড়াও দোকানের মালিক নওশাদকে ধরার জন্য তার ঘরে যায়। পালিয়ে যাওয়ায় তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
সিএমপির কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসিন জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পেয়েছে। আমরা ১ জনকে গ্রেফতার করেছি। বাকীদেরও দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। 
এই ঘটনায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য মহররম হোসাইন বাদি হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের নামে মামলা করেছেন। এলাকার লোকজন ও পুলিশ সদস্যরা জানান, নওশাদ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে বেআইনী বিস্ফোরক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। 
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) এর সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামসহ চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ। দ্রুত সাংবাদিক মহররমের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। 

ডিসি/এসআইকে/আইএস