মিরসরাইয়ের ১৬ ইউপিতেই আ’লীগের চেয়ারম্যান

উত্তর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
নানান অঘটন-ঘটনার জন্ম দিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ১৬টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ১৩ ইউপিতে ভোট হয়েছে শুধু মেম্বার নির্বাচনের জন্য, বাকী ৩ ইউপিতে প্রতিদ্ব›দ্বীপ্রার্থী থাকায় চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন হয়েছে। দলীয় প্রার্থীদের ব্যাপকজাল ভোট, প্রভাব বিস্তার ও কারুচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন দুই স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী।  কেন্দ্র দখল, প্রভাব বিস্তার, প্রতিদ্ব›দ্বীপ্রার্থীর গাড়িতে হামলা, আগে থেকে নৌকাসহ নির্দিষ্ট ইউপি মেম্বারের প্রতীকে সীল মেরে রাখাসহ নানান অনিয়মের মধ্যেই মিরসরাইয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বাকী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার ৩ প্রার্থী। এনিয়ে উপজেলার ১৬ ইউপিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেন। 
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মিরসরাই সদর ইউনিয়নে শামছুল আলম দিদার নৌকা প্রতীকে ৭ হাজার ৩৮০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী সাইফুল্লাহ (ঘোড়া) পেয়েছেন ৬২ ভোট। 
খইয়াছড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মাহফুজুল হক জুনু নৌকা প্রতীকে ১১ হাজার ৪৩৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী জাহেদ ইকবাল চৌধুরী (ঘোড়া) পেয়েছেন ৭৯২ ভোট। 
ইছাখালী ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নুরুল মোস্তফা নৌকা প্রতীকে ৯ হাজার ৫১০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মোস্তফা ভূঁইয়া (আনারস) পেয়েছেন ৩ হাজার ৩১৯ ভোট।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউপির ১৩টিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৩ জন চেয়ারম্যানপ্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। এই ১৩টি ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ও সংরক্ষিত সদস্য পদে এবং বাকী ৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান-মেম্বারপদে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয় বৃহস্পতিবার। 
মিরসরাই সদর ইউনিয়নে ইভিএম এ এবং বাকী ১৫টি ইউনিয়নে ব্যালটে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ৩ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৮৯ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ১১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।
নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেলেন প্রার্থীও
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে খইয়াছড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খইয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় মাঠে ভোটারদের উপস্থিতি না থাকলেও ওই সময় ৮টি বুথে ৪৬০টি ভোট সংগ্রহ করা হয়। নৌকার এজেন্ট থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের কোনো এজেন্ট ছিল না। প্রতিটি বুথের ভেতর নৌকার ব্যাজ লাগানো একাধিক কর্মীকে দেখা যায়। সকাল ১০ টায় ভোট দিতে আসার সময় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদ ইকবাল চৌধুরীর গাড়ি আটকানো হয়। এ সময় পাথর ছুড়ে তার গাড়ির গ্লাসও ভেঙ্গে দেওয়া হয়। পথে হামলার ঘটনা হলেও জাহেদ ইকবাল চৌধুরী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খইয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার জন্য যান। জাহেদ ইকবাল চৌধুরী তার ভোট দেন দিলেও ৬নং বুথে তার বোন খালেদা আক্তার চৌধুরী ভোট দিতে গেলে দেখেন চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক, মেম্বার পদে মোরগ ও সংরক্ষিত মেম্বার পদে মাইক প্রতীকের ব্যালটে সীল আগে থেকে মারা। এটি দেখে তিনি তার ভাইকে (জাহেদ ইকবাল চৌধুরী) কে বললে তিনি তার সত্যতা পান। পরবর্তীতে ৫নং বুথে গিয়েও একই দৃশ্য দেখেন।
৬নং বুথের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ওবায়দুল্লাহ বলেন, নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা অনেকটা জোর করে ব্যালটে সীল মেরে ফেলে। সকাল থেকে এভাবে কয়টি ব্যালটে সীল মারা হয়েছে তার উত্তর তিনি দেননি।
প্রার্থীরা যা বললেন
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুল হক জুনুর নির্দেশে তার কর্মীরা আমার কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা করে আসতেছে। ইউনিয়নের কোথাও আমার পোস্টার, ব্যানার লাগাতে দেয় নাই। নির্বাচনে কেউ যাতে এজেন্ট না হয় সেজন্য সবাইকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে আমার এজেন্ট থাকতে দেয়া হয়নি। আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোট দিতে যাওয়ার সময় খইয়াছড়া ঝর্ণা রোড এলাকায় মাহফুজুল হক জুনুর কর্মীরা আমাদের গাড়িকে লক্ষ্য করে রকেট লাঞ্চার, ককটেল ও পাথর ছুঁড়ে মারে। এসময় আমার স্ত্রী, বোন, মেয়ে, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী গুরুতর আহত হয়। শত বাধা পেরিয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখি চেয়ারম্যান পদে সব ব্যালেট নৌকা প্রতীক ও মেম্বার পদে মাইক, মোরগ প্রতীকে সীল মারা। প্রহসনের এই নির্বাচন আমি বর্জন করলাম। নৌকা প্রতীকে সীল মারা ব্যালটে নির্বাচনের বিষয়ে আমি উচ্চ আদালতে মামলা করবো’।  
খইয়াছড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহফুজুল হক জুনু বলেন, ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী জাহেদ ইকবাল চৌধুরী যে অভিযোগ করেছেন এগুলো মাঠ থেকে সরে যাওয়ার জন্য তার কৌশল হতে পারে।
ইছাখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোস্তফা ভূঁইয়া (আনারস) বলেন, সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্র নৌকা প্রার্থীর লোকজন দখল করে ফেলে। ভোটাররা কেন্দ্রে গেলেও নৌকা প্রতীকে উন্মুক্ত ভোট মারা হয়েছে। আমি এই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, দুপুর ১২ টায় ১২নং খইয়াছড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহেদ ইকবাল চৌধুরী ও বিকাল ৪ টার একটু আগে ইছাখালী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা ভূঁইয়া নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ডিসি/এসআইকে/আরএআর